করোনার ধাক্কায়, জাহাজ ভাঙ্গায় শীর্ষে উঠলো ভারত; দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

নিজস্ব সংবাদদাতা : কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা লেগেছে দেশের জাহাজভাঙ্গা শিল্পে। পুরনো বা অচল হয়ে যাওয়া জাহাজ ভাঙ্গার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে প্রথমস্থান দখলে থাকা বাংলাদেশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর নয় মাসে জাহাজ ভাঙ্গা তালিকার শীর্ষে উঠেছে ভারত; সেই দেশ জাহাজ ভেঙ্গেছে ১৪২টি। আর বাংলাদেশ ৯৮টি জাহাজ ভেঙ্গে দ্বিতীয়স্থানে নেমে গেছে। তৃতীয়স্থানে উঠেছে তুরস্ক। আর চতুর্থস্থানে আছে পাকিস্তান। বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্লাটফর্ম’ প্রকাশিত ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রকাশিত তালিকা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

তালিকা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছে বাংলাদেশে; জাহাজের সংখ্যা এবং ওজনের দিক থেকেও শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। জাহাজ ভাঙ্গার দিক থেকে বাংলাদেশ ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও শীর্ষে ছিল। আর বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল ভারত। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারির সময়ে এসে বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকেই ভারতের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মাস যত গড়িয়েছে ভারতের সাথে বাংলাদেশর ব্যবধান ততই বেড়েছে।

কেন জাহাজ ভাঙ্গায় ছিটকে পড়লো বাংলাদেশ জানতে চাইলে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, নতুন বাজেটে ভ্যাট এবং এটিভি (অগ্রিম ভ্যাট) আরোপের কারণে আমরা ভারতের চেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছি। প্রতি জাহাজ কিনতে এখন টন প্রতি তিন হাজার টাকা বাড়তি ভ্যাট দিতে হচ্ছে ফলে জাহাজ ভাঙ্গায় খরচ বেশি পড়ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলেও আমরা আগামীতে আরও পিছিয়ে পড়বে।
দেশের প্রথম ও একমাত্র আর্ন্তজাতিকমান সম্পন্ন গ্রীন শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড তৈরী করে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত করা পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জহিরুল ইসলাম বলেন, কভিড-১৯ মহামারি এবং সর্বশেষ বন্যার কারণে চাহিদা কমেছে। এই কারণেও আমাদের সেক্টরে ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আমরা এগুতে পারবো না যদি নতুন আরোপিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার না হয়। এডভ্যান্স ট্রেড ভ্যাট ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও ভ্যাট অফিস থেকে সেই টাকাও আমরা ফেরত পাচ্ছি না।

লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা ‘আঙ্কটাডের’ গত বছর শেষে প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০১৯ প্রতিবেদনমতে, ২০১৮ সালেও জাহাজভাঙায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। সে বছর বিশ্বে যত জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশই বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছিল। ভারতকে টপকে এই অবস্থান নেয় বাংলাদেশ। অথচ গত বছর ২০১৯ সালে বিশ্বে ৬৭৪টি সমুদ্রগামী পুরোনো জাহাজ বিক্রি হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা কিনেছেন ২৩৬টি জাহাজ। গত বছর বিশ্বে যত জাহাজ বিক্রি হয়, তার ৬৫ শতাংশই কিনেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের কারখানা মালিকেরা।

বিশ্বের অনেক দেশ জাহাজভাঙা থেকে সরে আসার মূল কারণ হলো পরিবেশদূষণ। সেসব দেশে ইস্পাতপণ্য তৈরির জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা বা মৌলিক কাঁচামাল আকরিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে বাংলাদেশে রড তৈরির কারখানাগুলোতে এখনো কাঁচামালের একটা অংশ জোগান দেয় জাহাজভাঙা কারখানা। তাতেই শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে এই খাতটি। শীর্ষ স্থানে উঠে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে বলে এনজিও শিপব্রেকিং প্লাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ২৪ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রমিক মারা গেছেন ৮ জন।