কলম্বো ও সিঙ্গাপুর বন্দরে ইমারজেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ প্রত্যাহারে সরকারের হস্তক্ষেপ চায় বিজিএমইএ

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২০
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

নিজস্ব সংবাদদাতা : শ্রীলংকার কলম্বো বন্দর ও সিঙ্গাপুর বন্দরে আরোপিত সারচার্জে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা; এই মাশুলকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দ্রুত প্রত্যাহার চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে গার্মেন্ট মালিকের সংগঠন বিজিএমইএ। তারা বলছে, এমনিতেই কভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা চরম ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা করছেন। এরমধ্যে শিপিং লাইনগুলোর আরোপ করা ‘ইমারজেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ’ পণ্য পরিবহনে বাড়তি ব্যয় তাদের ব্যবসাকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলবে।

জানতে চাইলে গার্মেন্ট মালিকের সংগঠন বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি আবদুস সালাম শিপিং এক্সপ্রেসকে বলেন, এই ধরনের মাশুল আদায় অযৌক্তিকই নয়; অগ্রহনযোগ্য। এটা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এই মাশুলের কারণে আমাদের তৈরী পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বাড়বে। সেইসাথে পণ্য রপ্তানিতেও বাড়তি খরচ করতে হবে। এই বাড়তি টাকা তো বিদেশি ক্রেতা আমাদের দিবে না। ফলে ব্যবসা আরও অনিশ্চয়তায় পড়বে।

এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের হস্তক্ষপ চেয়ে আবেদন করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ আমরা ব্যবসা করতে পারলেই তো শিপিং লাইন ব্যবসা করবে; পণ্য পরিবহন করতে পারবে। আমরা নিঃস্ব হলে পণ্য পরিবহন কিভাবে হবে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

তবে গার্মেন্ট মালিকদের এই দাবি মেটানোর এখতিয়ার দেশের শিপিং লাইন এজেন্টগুলোর নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজন্টস এসোসিয়েশন সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী শিপিং এক্সপ্রেসকে বলছেন, আমরা বিদেশি লাইনগুলোর দেশিয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি। এখানে আমাদের করণীয় কিছু নেই। শিপিং লাইনগুলোর কেন্দ্রীয় অফিস একমত হয়ে সিদ্ধান্ত দিলে আমরা কেবল সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিবো। বিজিএমইএ্ দাবি আমরা শিপিং কম্পানির কেন্দ্রীয় অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি।

তিনি বলছেন, ফিডার জাহাজগুলো দুই বন্দরে বসে থাকার কারণে দিনে ১০ হাজার মার্কিন ডলার বাড়তি খরচ হচ্ছে; এই বাড়তি টাকা কোত্থেকে আসবে। খরচ সামলানোর জন্য এই মাশুল আরোপ করেছে বিশ্বের সব লাইনগুলো। শুধু বাংলাদেশ নয়। তবে দুই বন্দরে বন্দর পরিস্থিতি ভালো হলে সারচার্জ প্রত্যাহার হবে।

এখন সিঙ্গাপুর বন্দরে একটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে দুই থেকে তিন দিন এবং কলম্বো বন্দরে সময় লাগছে এক সপ্তাহ। এর ফলে আমদানি পণ্য আসতে বাড়তি সময় যেমন লাগছে; তেমনি রপ্তানি পণ্য পৌঁছানো জটিলতায় পড়েছে।

ইউরোপ-আমেরিকা-চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে কনটেইনার ভর্তি পণ্য সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে পারে না। প্রধানত চারটি বন্দর হয়েই এসব পণ্য চট্টগ্রামে পরিবহন হয়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো দুটি বন্দর হয়ে বাংলাদেশের ৮১ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। এখন দুটি বন্দরে জাহাজজটের কারণে জাহাজ মালিকরা ক্ষতি পোষাতে এরই মধ্যে ‘ইমার্জেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ’ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। বিভিন্ন শিপিং কম্পানি গত ১৫ নভেম্বর থেকে সেটি কার্যকর করেছে। এর ফলে পণ্য পরিবহনে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে এতে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। আর জাহাজের শিডিউল ঠিক না থাকলে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হবে রপ্তানিকারকদের।

খাতুনগঞ্জের মসলা পণ্যের আমদানিকারক অসীম কুমার দাশ বলেন, ‘আমার এক কনটেইনার দারচিনি চীন থেকে কলম্বো বন্দরে পৌঁছেছে ২৩ অক্টোবর; ২৮ অক্টোবর সেটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা। অথচ ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সেটি কলম্বো বন্দরেই আটকে ছিল।’ জুনিয়র চেম্বার চট্টগ্রামের সাবেক এই সভাপতি বলছেন, যথাসময়ে পণ্য না পৌঁছায় আমার ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাংক সুদ যোগ হচ্ছে; আবার সব পণ্য একসঙ্গে যখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে তখন বাজারে একটি ‘সেলস প্রেসার’ তৈরি হবে। এই চাপে পড়ে পণ্য বিক্রির অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে; অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।