চট্টগ্রাম বন্দরে স্বয়ংক্রিয় নিলাম পদ্ধতি চালু।

প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২০

নিজস্ব সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা পণ্য এবং বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া পণ্য নিলামে তুলতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গতকাল মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদ্ধতি চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতদিন সনাতন পদ্ধতিতে বিডাররা স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে বিডিংয়ের মাধ্যমে নিলামে অংশগ্রহণ করলেও গত বছর থেকে সিল টেন্ডারে (নির্ধারিত বাক্সে টেন্ডার ড্রপ করা) অংশগ্রহণ করে আসছিল তারা। এই প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ ও গতিশীল করতে ই-অকশনের ব্যবস্থা করছে চট্টগ্রাম কাস্টম।
নতুন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে নিলামে অংশ নিতে পারবে বিডাররা। একইসাথে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে তালিকাভুক্ত না হলেও নিলামযোগ্য পণ্য ক্রয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত নিলামে অংশ নিতে পারবেন যে কেউ। সেক্ষেত্রে নিলামসংক্রান্ত স্থায়ী আদেশে উল্লেখ সাধারণ নিয়মাবলি অংশগ্রহণকারীদের অনুসরণ করতে হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম লাইট হাউজ নিউজ ক্লাবকে বলেন, এখন ১৬টি লট নিয়ে ই-অকশন কার্যক্রম শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে এর পরিধি বাড়াতে থাকব। এর মধ্যে ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেলে সেগুলো এনবিআরের সহায়তা নিয়ে আমরা ঠিক করে নেব। এর আগে ২০১৮ সালে অনলাইনে নিলামের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, তখন কিছু সমস্যা চিহ্নিত হয়েছিল। এসব সমস্যা এনবিআরের সাপোর্ট নিয়ে পরবর্তী সময়ে ঠিক করা হয়েছে। ধাপে ধাপে অনলাইনে নিলাম পরিচালনা করতে গিয়ে যখন দেখা যাবে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ছে না, তখনই শতভাগ ই-অকশন আমরা বাস্তবায়ন করব। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই অনলাইনে নিলাম করার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীকে কাস্টম হাউজে আসতে হবে না। বরং বাসা কিংবা অফিস যেকোনো জায়গায় বসেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সাবমিট করে নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পদ্ধতির নিলামে সিন্ডিকেটের কারণে নিলাম পণ্যের সঠিক দাম না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের বারবার নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়া, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে নিলামে অংশ নেয়ার অভিযোগও আছে। এতেআগ্রহী সাধারণ ক্রেতা উপযুক্ত দাম দিয়ে পণ্য কেনার ইচ্ছা থাকলেও নিলামে অংশ নিতে পারে না। নিলাম প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইনে বাস্তবায়ন করা গেলে পণ্যের উপযুক্ত দাম পাওয়া যাবে এবং সরকার উপযুক্ত রাজস্ব পাবে।
জানতে চাইলে বিদেশি শিপিং কম্পানি জিবিক্স লজিস্টিকসের অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাসির রুবাইয়াত বলেন, ই অকশন চালু হওয়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় উদ্যােগ। বন্দরে পণ্য পড়ে থাকার সবচে বড় কারণ হচ্ছে নিয়মিত নিলাম অনুষ্ঠিত না হওয়া। ই অকশন চালু হলে নিয়মিতভাবে নিলাম আয়োজন করতে হবে। তা না হলে সুফল মিলবে না।
তিনি বলেন, একটি কন্টেইনার যত বেশি ব্যবহার হবে তত বেশি ব্যবসা হবে। একটি কন্টেইনারে পণ্য যদি মাসের পর মাস বন্দরে পড়ে থাকে তাহলে বন্দরের যেমন স্থান সংকটে পড়তে হয়; তেমনি আমরা যারা এই খাতের ব্যবসা করি তারাও বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়ি।নিয়মিত নিলাম আয়োজন করতে পারলে বন্দরের কার্য্ক্রমে গতিশীলতা অনেক বাড়বে; কন্টেইনার জটে পড়তে হবে না। আর আমরা চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার আটকে থাকার দুর্নাম থেকে বেঁচে যাই।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বর্তমানে আমদানি হওয়া পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নেয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিস দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নোটিস দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আমদানিকারকের আনা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্যও নিলামে তোলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পণ্যের বাজারদর যাচাই করে কর্তৃপক্ষ। এরপর কাস্টমস ডিউটি ও পোর্ট চার্জ যুক্ত করে এর প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করা হয়। কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে প্রাক্কলিত দরের ৬০ শতাংশ দর পেলে তা বিবেচনায় আনা হয়। অন্যথায় দ্বিতীয় দফা নিলাম আহ্বান করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি দর পেলে নিলামে ওঠা পণ্য বিক্রি করা যাবে। অন্যথায় আহ্বান করতে হবে তৃতীয় দফা টেন্ডার। সর্বশেষ এ টেন্ডারে দর যা উঠবে, তাতেই পণ্য দিতে বাধ্য থাকবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে নিলাম কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট