চরম আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে কোস্টাল জাহাজের নাবিকরা

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০

নিজস্ব সংবাদদাতা: যখন পুরো দেশ লকডাউনে তখন তাদের অক্লান্ত শ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াও জীবন ঝুঁকি নিয়ে দেশের ৮০%পন্য পরিবহন করে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর থেকে অন্য নদী বন্দরগুলোতে । কোস্টাল জাহাজের নাবিকরা জাহাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীবন্দর গুলোতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আর তাদের অনুভূতিতে কোস্টাল নাবিক পরিবারগুলোতে করোনার ভয় বাসা বাঁধছে । প্রতিদিন নতুন নতুন মৃত্যুর খবরে বাড়ছে মানসিক চাপ আর বাহিরের দুনিয়ার আকর্ষণ। কয়েকটা দিন ঘরে কাটানোর পর খোলা মাটিতে পা রাখার ইচ্ছা এখন দুর্নিবার। এই যখন ডাঙ্গার অবস্থা, তখন কোস্টাল নাবিকদের খবর নেয়ার কেহই নেই !! জলের নাবিক এরা বছরের বড় সময় কাটান নদী-সাগরে, বন্দর থেকে বন্দরে নোঙ্গর করেন। অথই দরিয়ায় যারা ডাঙ্গার স্বপ্নে বিভোর থাকেন তারা। এই করোনা মহামারীতে কেমন আছেন আমাদের কোস্টাল নাবিকরা।
এখনো বিশাল সাগরে প্রতিটি ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে থাকে রহস্য। আছে বিপদ ও ঝড়ের শঙ্কা এবং আছে জলদস্যুর ভয়। এত সব ঝুঁকির মুখে জাহাজে ভেসে এক বন্দর থেকে অন্য যাওয়া, যতদিন জলে থাকে ততদিন ডাঙা তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। সাগরযাত্রায় একেকটি দিন যায়, আর বাড়ি ফেরার স্বপ্ন একটু একটু করে এগিয়ে আসতে থাকে নাবিকের কাছে। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাস হানা দিয়েছে নাবিকের সেই স্বপ্নের মাঠে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে পৃথিবী থেমে আছে। যে যেখানে ছিলো, সেখানেই থাকার নির্দেশনা রয়েছে নাবিকেরাও আছেন, কাটছে না সঙ্কট। কবে কাটবে, তাও অনিশ্চিত। নেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম অনেক জাহাজে রেশনের টাকা সংকট বাস্তবায়নের বেশিরভাগই জাহাজে ০২/০৩ মাসের সেলারি বাকি, সময়টা আরো লম্বাও হতে পারে বলেই সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সংক্রমণমুক্ত থাকার এই প্রক্রিয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন নাবিকেরা। একদিকে আপনজনের কাছে যাওয়ার আকুতি। অন্যদিকে করোনার শঙ্কা। এই দুইয়ে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জীবন। নদী এবং সাগরে জাহাজ ভাসছে। তবে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধে আটকে আছে ক্লান্ত নাবিক। এক নাবিক তার মাকে লিখেছেনঃ কেমন আছেন মা?
মা আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি আমার যেনো দম বন্ধ হয়ে আসতেছে, মা আমি এখনো বেতন পাইনি, মা আমার ০২/০৩ মাসের বেতন বাকি আপনারা কিভাবে চলতেছেন? আমার মন চায় আমি এখনি আপনাদের দেখতে চলে আসি কিন্তু মা কখনো ছুটি নেই কখনো টাকা নেই, এমতাবস্থায় গেলে যে করোনা ঝুঁকিও থাকে, মা জানি আপনাদের খানা খোরাকি কষ্ট হচ্ছে আমি বেতন পাইলে আসতে না পারলেও টাকা পাঠিয়ে দিবো, ভালো থাকুন মা আমার জন্য দোয়া করবেন।

অথচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরের পণ্যবাহী জাহাজের নাবিকদের এসব খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ হচ্ছে না সংবাদমাধ্যমগুলোতে।

দীর্ঘ এই লকডাউন এ আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত কোস্টাল নাবিকের অধিকাংশ পরিবার। কোস্টাল নাবিকদের দুইটি সংগঠন আছে, কিন্তু এই সংগঠন দুটির ত্রাণ সহযোগিতা কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো কোনো কিছু করেননি বলে জানিয়েছেন অনেক  নাবিক । সরকারের পক্ষ থেকেও নামমাত্র বা যতসামান্য ত্রাণ কার্যক্রম করোনার প্রথমদিকে চালু থাকলেও তা আপাতত এই কার্যক্রমের কোন খোঁজ খবর নাই। নৌ সংগঠনগুলো বারবার কোস্টাল নাবিকদের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অনেক নাবিকের অভিযোগ।
বাংলাদেশ আভ্যন্তরিন নৌযানে কর্মরত ইঞ্জিন চালক মোঃ আমান উল্যাহ বলেনঃ আমরা সুবিধাবঞ্চিত কোস্টাল জাহাজের নাবিকগণ এই ব্যাপারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।