জাহাজ ভর্তি ভয়াবহ বিস্ফোরকের চালান বৈরুতে পৌঁছল যেভাবে

প্রকাশিত: ২:২৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: লেবানন সরকার বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য বন্দরের গুদামঘরে ২,৭৫০ টন অ্যামোয়িাম নাইট্রেটের মজুতে আগুন ধরে যাওয়াকে দোষারোপ করেছে।

এত বিশাল পরিমাণ ভয়ানক দাহ্য পদার্থ ছয় বছরের ওপর শহর কেন্দ্রের এত কাছে কোন নিরাপদ ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে গুদামঘরে কীভাবে রেখে দেয়া হল তা নিয়ে দেশটির জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। তারা এটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে বন্দর নগরীর বিস্তীর্ণ জনপদ তার উৎসের নাম সরকার করছে না, কিন্তু এটা জানা যাচ্ছে যে মলডোভিয়ান পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি রোসাস ২০১৩র নভেম্বর মাসে ঠিক ঐ পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে বৈরুতে নোঙর করেছিল।
রাশিয়ান মালিকানাধীন জাহাজটি জর্জিয়ার বাটুমি থেকে যাত্রা শুরু করে ২০১৩-র সেপ্টেম্বর মাসে। সেটির গন্তব্য ছিল মোজাম্বিকের বেইরা।

জাহাজটিতে ছিল ২,৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। এই রাসায়নিক সাধারণত আসে ছোট গোল টুকরোর আকারে। কৃষিকাজে সারের জন্য এই রাসায়নিক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে জ্বালানি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এটা দিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করা যায়, যা খনিতে বিস্ফোরণের কাজে এবং নির্মাণ শিল্পে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগর দিয়ে যাবার সময় রোসাস জাহাজটিতে কিছু “কারিগরি ত্রুটি” ধরা পড়ে এবং জাহাজটি বৈরুত বন্দরে নোঙর করতে বাধ্য হয়। এই তথ্য এসেছে জাহাজ শিল্পের সাথে জড়িত ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে, যেটি শিপিংঅ্যারেস্টেডডটকম নামে একটি নিউজলেটারে প্রকাশিত হয়েছিল। ঐ প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাহাজের কর্মীদের পক্ষের লেবানীজ আইনজীবীরা।
বৈরুত বন্দরের কর্মকর্তারা রোসাস জাহাজটি পরিদর্শন করেন এবং সেটিকে “সমুদ্র যাত্রার জন্য নিষিদ্ধ” ঘোষণা করেন বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। জাহাজের বেশিরভাগ কর্মীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাঠানো হয়নি শুধু জাহাজের রুশ ক্যাপ্টেন বরিস প্রোকোশেফ এবং আরও তিনজনকে, যারা ইউক্রেনিয়ান বলে বলা হয়।

মি. প্রোকোশেফ বৃহস্পতিবার রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেন যে, রোসাস-এ লিকেজের কিছু সমস্যা হচ্ছিল কিন্তু জাহাজটির সমুদ্র যাত্রার জন্য কোন সমস্যা ছিল না।

তিনি আরও বলেন, জাহাজটির মালিক জাহাজটিকে বৈরুতে পাঠান সেখান থেকে ভারী যন্ত্রপাতির বাড়তি কিছু মাল জাহাজে তোলার জন্য। উদ্দেশ্য ছিল দেশটির অর্থনৈতিক অসুবিধার মধ্যে তাদের সহায়তা করা।

কিন্তু জাহাজের কর্মীরা ওইসব ভারী যন্ত্রপাতি নিরাপদে জাহাজে তুলতে পারেনি। এরপর জাহাজের মালিক বন্দরের যে ভাড়া তা যখন দিতে ব্যর্থ হন, তখন লেবাননের কর্তৃপক্ষ জাহাজটি সেখানে জব্দ ক’রে সেটি বসিয়ে দেয় বলে তিনি জানান।

সূত্র- বিবিসি