পায়রা এবং মাতারবাড়ি বন্দরকে গভীর সমুদ্র বন্দর বলা হলেও তার গভীরতা পাচ্ছে না

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান বিশ্বের সমুদ্র বন্দর গুলোতে অন্তত ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করা যায়। ২০২৫ সাল নাগাদ ২৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজই প্রাধান্য পাবে বেশিরভাগ বন্দরে। যদিও এ ধরনের জাহাজ চলাচলের জন্য যে গভীরতা প্রয়োজন তা এখনও নেই বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরেরই।

বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে মাতারবাড়ীকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে এখন পর্যন্ত। পটুয়াখালীর পায়রায়ও একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ দুটি বন্দরের কোনোটিরই নেই গভীর সমুদ্রবন্দর করার মতো গভীরতা। মাতারবাড়ী বন্দরকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য বিবেচনা করা হলেও বন্দরটির সর্বোচ্চ গভীরতা সক্ষমতা ১৩ দশমিক ৮ মিটার। আর পায়রা বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা সক্ষমতা ১৪ মিটার। এ অঞ্চলের সবচেয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর সিঙ্গাপুরের গভীরতা ২৪ দশমিক ৫ মিটার, যার ধারেকাছেই নেই মাতারবাড়ী ও পায়রা।

পায়রা বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করছে নেদারল্যান্ডসের রয়েল হাসকনিং ডিএইচভি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষণা, পরীক্ষা ও পরামর্শক ব্যুরো (বিআরটিসি)। পায়রা বন্দর নিয়ে কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরিও করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সেখানে বন্দরের উন্নয়ন ভিশন, বাজার পূর্বাভাস, অবকাঠামো নির্মাণ এবং বন্দর উন্নয়ন কৌশল নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া অঞ্চলের বন্দরগুলোর সর্বোচ্চ গভীরতার সক্ষমতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেও দেখানো হয়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যমান সমুদ্রবন্দর দুটির মধ্যে মোংলা বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা সক্ষমতা ৭ মিটার, আর চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বোচ্চ গভীরতা সক্ষমতা ৯ দশমিক ২ মিটার। অন্যদিকে নির্মাণ হতে যাওয়া মাতারবাড়ী ও পায়রার গভীরতা সক্ষমতাও ১৪ মিটারের বেশি নয়, যা গভীর সমুদ্রবন্দর বিবেচনায় খুবই অপর্যাপ্ত। কারণ যে ড্রাফটের জাহাজ গভীর সমুদ্রবন্দরে চলাচল করে সেগুলো এসব বন্দরে ভিড়তেই পারবে না।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যানে বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজগুলো নিয়ে বাংলাদেশের জন্য দুই ধরনের জাহাজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬ দশমিক ৬ থেকে ১২ দশমিক শূন্য ১ মিটারের জাহাজ এবং অন্য বন্দরের জন্য ১০-১৪ মিটার ড্রাফটের প্যানাম্যাক্স ক্লাসের জাহাজের কথা বলা হয়েছে এতে। পরিকল্পনা প্রতিবেদন তৈরির সময়ে আমদানি-রফতানিতে জাহাজ পরিচালনাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে। তাদের পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ মান হিসেবে প্যানাম্যাক্স ক্লাসের জাহাজের কথা বলা হয়েছে। বন্দরের উন্নয়ন কৌশল প্রস্তুতে বন্দর ব্যবহারকারীদের আয়-ব্যয়ের দিকটিও বিবেচনায় রেখেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

পরামর্শক দলের এক বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাইটহাউস নিউজ ক্লাব কে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনাটি দেয়া হয়েছিল তা মন্ত্রণালয়ের পছন্দ হয়নি। তাই আমরা আবারো একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছি। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই, যা আছে নদীবন্দর। কারণ প্রতিটি বন্দরই নদীর ভেতরে। ফলে আমাদের পরামর্শ ছিল নদী থেকে বের হয়ে সমুদ্রে বা অফশোরে বন্দরটি নির্মাণ করার, যা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণে উপযোগী হতো।

তার ভাষ্য, একটি গভীর সমুদ্রবন্দর হতে কমপক্ষে ১৮ মিটারের গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু অনশোর বা ডাঙায় বন্দরটি হলে তা গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার জন্য উপযোগী নয়।

দেশের ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ফলে বন্দরের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়রা বন্দরের ১৪ মিটার গভীরতা চাইলে পুরো চ্যানেলটিতেই এ পরিমাণ গভীরতা লাগবে। কিন্তু পায়রা বন্দর যেতে যে পথটি ব্যবহার করা হবে বা ‘অ্যাপ্রোচ ওয়ে’ সেখানে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতা খুবই কম। সেখানে যে পরিমাণ খনন করতে হবে তা বছরব্যাপী বন্দরে জাহাজ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করবে।

এছাড়া নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর হবে না। গভীর সমুদ্রবন্দর একটাই সেটা মাতারবাড়ীতেই হবে। এখন বিকল্প আমরা চিন্তা করছি না। পায়রায় ফাস্ট টার্মিনালের কাজ চলছে। আনুষঙ্গিক জেটি নির্মাণের টেন্ডার হয়ে গেছে। মাতারবাড়ীর যে প্রজেক্ট আছে সেখানেই গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত পরবর্তী কোনো চিন্তাভাবনা আমরা করছি না।