পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাহাজে আটকে আছে 4000 বাংলাদেশি নাবিক

প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের অনেক নাবিক যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা কোভিড -19 এর কারণে বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না।

কোভিড -19 মহামারীর কারণে প্রায় চার হাজার বাংলাদেশী নাবিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাহাজে আটকা পড়েছেন যদিও সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) ছয়টি জাহাজের 156 জন নাবিক বিভিন্ন দেশে আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন অধিদফতর।

যদিও অনেক নাবিকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা কোভিড -19 এর কারণে বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় তারা দেশে ফিরতে পারছে না।

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিএসসির নাবিকদের তাদের জাহাজে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছে, সরকারের মার্কেনটাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট অফিস জানিয়েছে।
এদিকে, আটকে পড়া নাবিকদের পরিবারগুলি বাংলাদেশে অনিশ্চয়তায় জীবনযাপন করছে।

অন্যদিকে, পাঁচ জন বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে একটি সোমালি বন্দরে আটকে রয়েছে। দুবাই-ভিত্তিক সংস্থার জাহাজে থাকা 23 জন কর্মীর মধ্যে অন্য 18 জন ভারতীয় নাগরিক। কোভিড -19 এর কারণে তারা সোমালিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি, বা বিমানের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ফিরতে সক্ষম হয়নি।
এর মধ্যে মার্কস লাইনে কর্মরত চীপ অফিসার আব্দুর রউফ লাইটহাউস নিউজকে জানান, জাহাজ কর্তৃপক্ষের সাথে 4 মাসের চুক্তি , কিন্তু কোভিড -19 পরিস্থিতির কারণে তাকে এখন 7 মাস জাহাজে থাকতে হচ্ছে।
আশরাফুল আলম সুজিত নামে একজন সেকেন্ড অফিসার জানান, “আমাদের জাহাজটি একটি রাসায়নিক দ্রব্য বহনকারী ট্যাঙ্কার। আমরা 28 ই অক্টোবর, 2019 এ সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে জাহাজে উঠে কুয়েতের উদ্দেশে যাত্রা করি। আমাদের পরবর্তী পোর্ট সোমালিয়া। গত মে মাসের দশ তারিখ কোম্পানির সাথে আমার চুক্তি সমাপ্ত হয়।
“আমার চুক্তি শেষ হওয়ার পরেও আমি দেশে ফিরতে পারিনি। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আমরা আমাদের জাহাজে আটকে আছি।”

তিনি নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সরকারি শিপিং অফিসের, শিপিং মাস্টার জনাব মোহাম্মদ জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, কোভিড -১৯ এর কারণে বিভিন্ন জাহাজের নাবিক ও ক্রু বিভিন্ন দেশে আটকা পড়েছে। “আমরা তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছি এবং তারা তাদের পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করছি।”

বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার বলেছেন, “বিমান যোগাযোগ চালু হলে নাবিকদের ফিরিয়ে আনা হবে। আমি তাদের জাহাজে থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। আমি নিয়মিত তাদের সাথে যোগাযোগ করি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসসির জাহাজের একজন নাবিক বলেছিলেন, “আমাদের অনেক সহকর্মীর যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তারা বিভিন্ন দেশে জাহাজে আটকা পড়েছেন। তারা সেই দেশের ভেতর ঢুকতে পারছেন না [ কোভিড -19-এর কারণে যার বাহিরে তাদের জাহাজটি নোঙ্গর করা আছে] “।

নৌ পরিবহন অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আমরা বাংলাদেশী নাবিকদের জাহাজ থেকে সাইন আউট করার অনুমতি দিচ্ছি।”

তবে বিদেশী নাবিকদের এটি করার অনুমতি নেই। আগে তারা জাহাজ থেকে সাইন আউট করে এবং বিমানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছেড়েছিল, তবে এখন তারা তা করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন বিমান যোগাযোগ, আবার চালু করা হলেও, সাইন আপ এর ক্ষেত্রে তাদের 72 ঘন্টার মধ্যে কোভিড -19 পরীক্ষার ফলাফল জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশের নাবিক রিক্রুটিং এজেন্সি সী এক্সপ্রেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, জনাব আবদুল্লাহ ভূঁইয়া শাহাদাত বলেন, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বেশকিছু নাবিক সরকারি শিপিং অফিসে সাইন অন করানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের পোর্ট গুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এবং বিমান যোগাযোগ স্থগিতের কারণে নাবিকদের ফ্লাইট দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমতাবস্থায় কোম্পানির সাথে আমাদের যোগাযোগ সার্বক্ষণিক চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে বিমান যোগাযোগ চালু হওয়া সাথে সাথে নাবিকদের জাহাজে যোগদান করানো যায়। আবার বিমান যোগাযোগ চালু হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক দেশে ওকে টু বোর্ড ছাড়াও ভিসার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে যথাসময়ে এম্বাসি গুলো না খুললে নাবিকরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে বলে তিনি আশংকা করছেন। এক্ষেত্রে তিনি সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং তিনি সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের করোনা কালীন যুগোপযোগী সিদ্ধান্তগুলোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।