Chittagong Port is the 8th largest port in the world

বিশ্বব্যাপী শীর্ষ বন্দরের তালিকায় ৬৭তম চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২১
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

বিশ্বব্যাপী একশ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৭তম এবং গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে ৩০ ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর গত বছর ২০২০ সালে প্রকাশিত তালিকায়ও চট্টগ্রাম বন্দর ছয় ধাপ এগিয়ে ছিল।

কিন্তু ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবার পিছিয়েছে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। আর ২০২১ সালের প্রকাশিত তালিকায় নয় ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম অবস্থানে এসে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর।

লন্ডনের শিপিং বিষয়ক বিশ্বের পুরনো সামযিকী ‌লয়েডস লিস্ট প্রতিবছর এই তালিকা প্রকাশ করে।

২০২০ সালের বিশ্বের ১০০ সমুদ্রবন্দরের পণ্য উঠানামার তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরী হয়েছে। আর এই তালিকা অনলাইনে  প্রকাশিত হয় তেইশ আগস্ট গত সোমবার।

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, মুলত ২০২০ সালের পণ্য উঠানামার তথ্য দিয়েই এই তালিকা তৈরী করা হয়েছে।

তখন কোভিড-১৯ মহামারির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছিল।

কিন্তু ২০২১ সালের তথ্য বিবেচনা করলে চট্টগ্রাম বন্দর অনেক এগিয়ে আছে। কারণ সেই ধাক্কা বন্দর সময় সাপেক্ষে কাটিয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা-গতিশীলতা বিন্দুমাত্র কমে যায়নি।অন্যদিকে ২০২০ সালে বন্দরে জাহাজ আসা-পণ্য লোড আনলোড কমে যাওয়ায় এই তালিকায় পেছানোর কারণ বলে মনে করেন তিনি।

বন্দর কতৃপক্ষের মতে যদি ২০২০-২১ অর্থবছরের পণ্য উঠানামা বিবেচনায় আনে তাহলে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি আছে।

গত অর্থবছরে কন্টেইনার উঠানামায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন শতাংশেরও বেশি,বন্দরে জাহাজ আসা বেড়েছে প্রায় আট শতাংশ আর সাধারন পণ্য উঠানামা বেড়েছ বারো শতাংশ।

রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, ২০২১ সালের পণ্য উঠানামার যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সেটি বিবেচনায় নিলে বছর শেষে আমরা ৩৩ লাখ একক কন্টেইনার উঠানামা করতে পারব।

ফলে বছর শেষে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে। আর সেই প্রবৃদ্ধির হিসাবের ভিত্তিতে

রয়েডস লিস্ট তালিকা তৈরী করবে ২০২২ সালে।জানা যায়, রয়েডস লিস্টে ১০০ বন্দরের তালিকায় ১০টিতেই আছে চীনের সাতটি বন্দর। এছাড়া দ্বিতীয়স্থানে আছে সিঙ্গাপুর।

তালিকায় বরাবরের মতোই প্রথম স্থানে চীনের সাংহাই বন্দর, দ্বিতীয় স্থানে আছে সিঙ্গাপুর, আর তৃতীয় স্থানে আছে চীনের নিংবো-জাশোন।

বন্দর কতৃপক্ষ

শুধু তাই নয় ১ থেকে ১০ বন্দরের তালিকায় তিনটি বন্দর ছাড়া বাকি সবই চীনের বন্দর। শীর্ষ ১০ বন্দরের মধ্যে ৭ নম্বরে থাকা দক্ষিন কোরিয়ার ভুষান বন্দরের পণ্য উঠানামা কমেছে।

নয় নম্বরে থাকা হংকং বন্দরেও পণ্য উঠানামা কমেছে। আর দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে ভারতের মুম্বাই বন্দর আছে ৩৯ নম্বরে, সেই বন্দরেও পণ্য উঠানামা কমেছে।

মুলত কোভিড মহামারির ধাক্কায় এই তালিকা থেকে পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর লয়েডস কর্তৃপক্ষ সেটি প্রতিবেদনে চিহ্নিতও করেছে।

একই মত ব্যাক্ত করেন শিপিং লাইনগুলোও।বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন পরিচালক মুনতাসির রুবাইয়াত লয়েডস তালিকা বিশ্লেষন করে বলেন, লয়েডস তালিকায় বিশ্বব্যাপী শীর্ষ বন্দরের তালিকায় পিছিয়ে ৬৭তম-তে পৌছানোর কারণ চট্টগ্রাম বন্দর  নয়।

তিনি বলেন কোভিড সময়ে বন্দরের দক্ষতার কোন ঘাটতি ছিল না। এটা মুলত বৈশ্বিক মহামারি সমস্যার কারনে।

কভিডের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লাগেছে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে। মার্চে কলকারখানা বন্ধ রাখার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এপ্রিল পরবর্তী সময় পর্যন্ত।

মার্চে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়েছে ৬১ হাজার ৭০০ একক কনটেইনার।

করোনার ধাক্কায় এপ্রিলে রপ্তানিতে ধস নেমে তা ১৩ হাজারে নেমে আসে। মে মাসে কিছুটা বেড়ে ৩০ হাজার এককে উন্নীত হয়, জুন মাসে সেটি আরো বেড়ে ৫০ হাজার এককে উন্নীত হয়েছে।

আর জুলাই মাসে রপ্তানি বেড়ে ৭২ হাজার ৩৫৯ এককে উন্নীত হয়। আগস্টে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৩১ একক, আর সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ৫৭ হাজার ৯০০ একক।

অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৫৫ হাজার ৬২২ একক কন্টেইনার, নভেম্বরে ৫৫ হাজার ৫৫৯ একক কন্টেইনার।

ফলে রপ্তানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লেগেছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী-চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্তে শিল্প-কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত না হলে ডিসেম্বর নাগাদ রপ্তানি স্বাভাবিকের অবস্থায় কখনোই আসতে পারতো না।

চট্টগ্রাম বন্দর

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের চিত্র থেকে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সার্বিক প্রমাণও মিলেছে।

অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানির ৮২ শতাংশ আসে, আর রপ্তানি পণ্যের ৯১ শতাংশই যায় এই বন্দর দিয়ে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, বিগত ২০১৯ সালে যেখানে বন্দরের ইতিহাসে রেকর্ড পরিমান ৩০ লাখ ৮৮ হাজার একক কন্টেইনার উঠানামা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালে সেই পরিমান দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৪০ হাজার একক। পরিমানের হিসেবে কন্টেইনার উঠানামা কমেছে প্রায় আড়াই লাখ একক। আর শতাংশের হিসেবে পণ্য উঠানামা কমেছে ৮ শতাংশ।

আরোও পড়ুন…

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ১৩তম নতুন মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী