Ship accidents have increased, the reputation of Chittagong port in the world's shipping sector is being tarnished

বেড়েছে জাহাজ দুর্ঘটনা, ক্ষুন্ন হচ্ছে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২০
লাইট হাউজ ফাইল ফটো

নিজস্বসংবাদদাতা : হঠাৎ করে বেড়ে গেল চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পণ্যবাহি জাহাজ দুর্ঘটনা । বন্দর কর্তৃপক্ষ চারটি অ্যাংকরেজে জাহাজ নোঙরে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৯ সালে নতুন নিয়ম চালুর আদেশ জারি করেছে কিন্তু শিপিং এজেন্টদের বিরোধিতার কারণে কার্যকর করতে পারেনি। মুলত চারটি অ্যাংকরেজের মধ্যে আলফা অ্যাংকরেজেই একসাথে অনেক জাহাজ নোঙরের প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।  এসব দুর্ঘটনা বাড়ায় বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‌“শীতকালে সাগর শান্ত থাকে বলে সাধারনত দুর্ঘটনা ঘটে না। এসব দুর্ঘটনাগুলো দেখে আমরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বন্দর জলসীমায় শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এর আগে আমরা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার শিপিং এজেন্টদের সাথে বৈঠকে বসবো। বৈঠকে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে আমারা আশাবাদী।“

বন্দরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সাল আজিম বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্রবন্দরের বহির্নোঙরে নির্ধারিত অ্যাংকরেজে জাহাজ নোঙরের নিয়ম চালু আছে। গত বছর একটি জাহাজের দুর্ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে আমি এ ধরনের পদ্ধতি চালুর যৌক্তিকতা অনুভব করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছিলাম। নতুন উদ্যোগের ফলে অবশ্যই বহির্নোঙরে শৃঙ্খলা ফিরবে। বিভিন্ন দেশে ট্রানজিট দেওয়ার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের বাড়তি চাপ বাড়বে তাতে এই পদ্ধতি বেশ সুফল দিবে।

অক্টোবরে দুর্ঘটনা ঘটে ৩টি জাহাজের, সেপ্টেম্বর ঘটে ১টি, আগস্টে ঘটে ২টি জাহাজ দুর্ঘটনা। এভাবে প্রতিমাসেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটে।সর্বেশেষ ৭ ডিসেম্বর বহির্নোঙরে দুটি জাহাজের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়।লাইবেরিয়া পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার ওশান লাভ জাহাজের সাথে, নোঙরে থাকা পনামা পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার গ্লোবাল জেনেসিস জাহাজের সংঘর্ষ হয় । এর আগে ৬ ডিসেম্বর হয়।লাইবেরিয়া পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার সীকন নিংবো জাহাজের সাথে মার্শাল আইলেন্ড পতাকাবাহী আর্টমোর এনকাউন্টার ট্যাংকার জাহাজের সংঘর্ষ হয় । দুটি জাহাজেই পণ্যভর্তি ছিল। ১৯ নভেম্বর কোমোরোস পতাকাবাহী ইউএনআই কনটেইনার জাহাজের সাথে পনামা পতাকাবাহী বাল্ক ক্যারিয়ার বুসান স্টার জাহাজের সংঘর্ষ হয়। সবগুলোই বিদেশি জাহাজ।

এসব দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, পণ্যবাহি বড় জাহাজগুলো কুতুবদিয়া গভীর সাগরে রেখে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করতে খরচ বেশি হয় বলে আমদানিকারকরা খরচ কমাতে পতেঙ্গা সৈকত বরাবর আলফা নোঙর এলাকায় জাহাজ এনে পণ্য খালাস করতে বেশি আগ্রহী থাকে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম গভীর এলাকায় বেশি গভীরতার জাহাজ এনে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হওয়ায় জাহাজগুলি এসব দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। বেশির ভাগ দুর্ঘটনায় একটি জাহাজের সঙ্গে আরেকটির সংঘর্ষ হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বহির্নোঙরে দুর্ঘটনারোধে পদক্ষেপ শক্তভাবে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিছু শিপিং এজেন্ট যারা পিঅ্যান্ডআই ক্লাবের সাথে জড়িত তারাই মুলত এর বিরোধিতা করছে।

এসোসিয়েশন সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, অ্যাসোসিয়েশন এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বন্দর জলসীমায় শৃঙ্খলা আনতে এটি কার্যকর করা উচিত। কারণ দুর্ঘটনা ঘটলে জাহাজের ক্ষতি হয়, জাহাজ মেরামতে আর্থিক ক্ষতি মেটাতে হয়। দুর্ঘটনা কমিয়ে না আনলে শিপিং সেক্টরে বন্দরের সুনাম ক্ষুন্ন হবে।

দুর্ঘটনার বিষয়গুলি জাহাজের স্থানীয় শিপিং এজেন্টর তাদের কেন্দ্রীয় অফিসকে  অবহিত করে। একইসাথে চট্টগ্রাম বন্দরকেও জানায়। এরপর জাহাজটির ক্ষতি নিরুপনে নিয়োগ হয় পিঅ্যান্ডআই ক্লাব। প্রতি দুর্ঘটনার বিপরিতে একটি করে পিএন্ডআই ক্লাব নিয়োগ করায় বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বিশ্বের শিপিং বানিজ্যে। দুর্ঘটনার বাড়ায় বহির্নোঙরে কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে বিদেশি শিপিং কম্পানিগুলো। তাই তারা চট্টগ্রাম বন্দরমুখি জাহাজ ভাড়া দিতে বাড়তি সতর্কতা নিবে আবার অনীহাও দেখাতে পারে।