হঠাৎ করে থমকে গেছে বাংলাদেশি ১৬ হাজার নাবিকের এর ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত: ৪:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২১
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

মেরিটাইম ডেস্ক :   Key worker হওয়ার শর্তেও হঠাৎ করে থমকে গেছে বাংলাদেশি ১৬ হাজার নাবিকের এর ভবিষ্যৎ । অনিশ্চয়তার মুখে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক রেমিট্যান্সের শক্তিশালী খাত।

বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর কারণে থমকে গেছে মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রা। এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন এর মাধ্যমে স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে আছে।

বিভিন্ন বিধিনিষেধের মাধ্যমে ভাইরাসটি সংক্রমনের নিয়ন্ত্রণ পুরো পৃথিবী ব্যাপী চলছে।

পৃথিবীব্যাপী এমন পরিস্থিতিতে ফ্রন্টলাইনার আর করোনা যুদ্ধাদের মত মেরিনার্সরাও তাদের জীবন বাজি রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কর্মযজ্ঞ।

পৃথিবীর অর্থনীতিকে সচল রাখতে সাগর, মহাসাগরের বুক চিরে নিজেদের জীবন বাজি রেখে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মানুষের জীবনযাত্রার অত্যাবশ্যকীয় মালামাল, ঔষধ পত্র, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাঁচামাল, ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি রসদ ও সরঞ্জাম নিয়ে নিজেদের কাজ অব্যাহত রেখেছেন মেরিনাররা।

বিশ্ব অর্থনীতির শতকরা ৯০ ভাগ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয় সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে।

এসব সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকরা মূলত চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নাবিকের চুক্তি সাধারণত ৮-৯ মাস হয়ে থাকে। ‌

চুক্তি শেষে নাবিকরা দেশে ফিরে আসে, তাদের কর্মস্থলে আবার নতুন নাবিক নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

এভাবেই মূলত চলতে থাকে আন্তর্জাতিক key workers খেতাবপ্রাপ্ত নাবিকদের দ্বারা বিশ্ব অর্থনীতি।

বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নাবিক তাদের চুক্তি শেষ করে জাহাজে আটকে আছে মাসকে মাস ধরে, অনেকে সাইন অফের জন্য হোটেলে আটকে আছে মাসকে মাস যাবৎ।

‌আন্তর্জাতিক ফ্লাইট গুলো বন্ধ থাকার কারণে জাহাজ ত্যাগ এবং যোগদানের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অনেক নাবিক সদস্যরা  দীর্ঘদিন ধরে জাহাজে থাকার ফলে মানসিক এবং শারীরিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

অন্যদিকে যারা এখনও জাহাজে যোগদান করতে পারেননি তারা অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত। ‌

নাবিকদের এই সংকট নিরসনের জন্য কিছুদিন আগে বাংলাদেশের নৌ মন্ত্রণালয় হইতে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয় যে, বাংলাদেশি নাবিকরা জাহাজে সাইন অফ এবং সাইন অন ভ্রমণের ক্ষেত্রে‌ সকল ধরনের ভ্রমণ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রাখার জন্য বলা হয়েছিল।

কিন্তু আশরাফুল ইসলাম নামে একজন নাবিক জাহাজে চাকরি শেষ হওয়ার পরেই ইতালির একটি বন্দর থেকে কোম্পানি তাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।

এয়ারপোর্ট বোর্ডিং পাস নেওয়ার সময় তিনি জানতে পারেন

কোভিড-১৯ প্রভাবিত সিফারার্সদের জন্য $৫৩০,০০০ ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ

সিভিল এভিয়েশনের জারিকৃত সর্বশেষ নোটিশ অনুসারে তিনি ইতালি থেকে দেশে ফিরতে পারবেন না।

আশরাফুল ইসলাম বলেন তিনি ১৪ দিন ধরে হোটেলে অবস্থান করছেন কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারবেন তা তিনি জানেন না। ‌

তিনি বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সি এবং সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানায়।

অতঃপর তারা এই বিষয়টি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বলে ইমেইল করেছেন কিন্তু আশানুরূপ কিছুই এখনো ঘটেনি। ‌

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে অনেক মেরিনার জাহাজে যোগদান করতে পারছেন না আবার অনেকে জাহাজ থেকে ফিরতেও পারছেনা।

ফলে বিদেশি জাহাজ মালিকরা ইন্ডিয়া ফিলিপাইন থেকে নাবিক নিয়োগে মনোনিবেশ করছে।

তাই হঠাৎ করে থমকে গেছে বাংলাদেশি ১৬ হাজার নাবিকের এর ভবিষ্যৎ ।

এমন চলতে থাকলে বাংলাদেশি মেরিনারদের আন্তর্জাতিক শিপিং মার্কেটে চাকরির ক্ষেত্র কমে যাবে।

আর বাংলাদেশ হারাবে বছরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি খাত।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এনাম চৌধুরী বলেন,

বাংলাদেশের মেরিন অফিসাররা বিশ্বজুড়ে পরিবার-পরিজনদের ছেড়ে মাসের-পর-মাস কাজ করেন তাদের অবদান প্রায় ৪০০ মিলিয়ন এর ও অধিক।

অথচ আমরা অ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সর্বত্র যোগাযোগ করেও এখন পর্যন্ত নাবিকদের শর্তহীনভাবে জাহাজের যোগদান এবং ফেরত আসার ব্যাপারে কোন উত্তর পাচ্ছিনা।

পৃথিবীর অন্যান্য মেরিটাইম প্রসিদ্ধ দেশগুলো নাবিকদের ব্যাপারে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এখন বাংলাদেশী নাবিকদের ব্যাপারে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে অনেক বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বাংলাদেশী মেরিনারদের চাকরির বাজারে।

এই বিষয়ে দেশের সবচেয়ে বড় রিক্রুটিং এজেন্সি হক অ্যান্ড সন্স এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন জি এম কাদরী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বিদেশি জাহাজ মালিকদের কাছ থেকে আমাদের অফিসার, নাবিকদের ভ্যাক্সিনেশন সনদ এর ব্যাপারে বার বার প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছি।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাবিকরা ভ্যাক্সিনেটেড না হলে আমাদের নাবিকদের চাকুরির বাজার টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ১৬৩ জাহাজসহ দেশি বিদেশি জাহাজে, ১১ হাজার মেরিন অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার এবং ৫ হাজার মেরিন ক্রু আছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেরিনারদের চাকরির বাজার রক্ষার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সাধারণ নাবিকরা।