প্লাস্টিকের করাল থাবায় বাংলাদেশ সহ পুরো পৃথিবী

সমুদ্র হল লবণাক্ত জলের পরস্পর সংযুক্ত জলরাশি যা পৃথিবীর উপরিতলের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ আবৃত করে রেখেছে। সমুদ্র পৃথিবীর জলবায়ুকে সহনীয় করে রাখে এবং জলচক্র, কার্বন চক্র ও নাইট্রোজেন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কোনো না কোনো স্থানে ফেলে দেওয়া একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট, গ্লাস, কাপ, স্ট্র, বেলুন স্টিক, প্লাস্টিক বোতল কিংবা প্লাস্টিক ব্যাগ তার গন্তব্য হিসেবে খুঁজে নিচ্ছে সমুদ্রকে। তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সেই এলাকার জীবন আর প্রকৃতিকে। জৈববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, যা থেকে মানুষেরও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে থাকা জীবেরা। ২০১৯ সাল নাগাদ, পৃথিবীতে ৭.৩ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, তৈরিকৃত এই প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশকে পুন:রায় ব্যবহার করা হয়েছে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে আর বাকী ৭৯ শতাংশই পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা আছে। জমা আছে বললে অনেকটাই ভুল হবে, ক্রমান্বয়ে এই প্লাস্টিক মানুষসহ সারা পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর জন্য হয়ে উঠেছে ক্ষতির কারন। কাগজ বা কাপড়ের তুলনায় অনেক টেকসই প্লাস্টিক।


এ কারনেই বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে এখনও সবার পছন্দ এই পণ্য। প্লাস্টিক ছাড়া এখন একদিনও কল্পনা করা যায় না। পৃথিবীতে এখন প্রতি বছর মাথাপিছু ৬০ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার হয়। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং জাপানের মত শিল্পোন্নত দেশগুলোতে এই পরিমান মাথাপিছু ১০০ কেজিরও বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পুঞ্জিভূত এই প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ দিনশেষে জমা হচ্ছে সমুদ্রে। সাধারনত যেকোনো দ্রব্য পরিবেশে রেখে দিলেই কিছুদিনের মধ্যে এর পচন শুরু হয়ে যায়। আর এই পচনের পেছনে দায়ী সাধারণত কিছু অণুজীব। বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সবধরনের পদার্থকেই ভেঙে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করতে পারে অণুজীব। কিন্তু কৃত্রিমভাবে নির্মিত প্লাস্টিক অণুজীবের আওতার বাইরে। তাই সমুদ্রে জমা হওয়া প্লাস্টিক বছরের পর বছর অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। অণুজীব এদের ভেঙে সরল উপাদানে পরিনত করতে না পারায়, বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে সমুদ্রে এদের পরিমান বেড়ে চলেছে। তবে তাপ, চাপ সহ অন্যান্য পরিবেশগত কারনে বড় আকারের প্লাস্টিক ক্রমান্বয়ে পরিণত হচ্ছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণিকায়, বৈজ্ঞানিক মহলে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। সাধারন প্লাস্টিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিকর এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণিকা। খালি চোখে এত ছোট প্লাস্টিক কণিকা চোখে পড়ে না বলে গভীর সমুদ্রের পানি আমাদের বেশ পরিষ্কার মনে হয়, কিন্তু ব্যাপারটি মোটেই সেরকম নয়। সামুদ্রিক প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণিকা গ্রহন করছে।


সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বড় অংশ সাধারনত খাদ্যের জন্য সমুদ্রে ভাসমান ক্ষুদ্র প্রাণীকণা (জুপ্ল্যাঙ্কটন) এবং উদ্ভিদ কণার (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন) উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ যখন সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে, তখন তা বেশ ভয়ংকরভাবেই প্ল্যাঙ্কটন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে প্ল্যাঙ্কটন সাইজের এই প্লাস্টিক কণাকে সামুদ্রিক মাছেরা যে খাদ্য মনে করে ভুল করছে সে ব্যাপারটি ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে গবেষকদের কাছে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্স আর অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে তিমিদের পরিপাকতন্ত্র থেকে প্রায় আটশত কেজির মতো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

জাতিসংঘের মতে, বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ প্রজাতি সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই ধ্বংসাবশেষের ৮০ শতাংশই প্লাস্টিকের। এটি অনুমান করা হয় যে, প্রতি বছর ১৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রের মধ্যে জমা হয় যা প্রতি মিনিটে একটি আবর্জনাপূর্ণ ট্রাক বোঝাইয়ের সমতূল্য। সামুদ্রিক মাছ, পাখি, কচ্ছপ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষে জড়িয়ে পড়ে বা আক্রান্ত হতে পারে যার ফলে তাদের দমবন্ধ হয়ে যায় এবং অনাহারে থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু মুখে পতিত হয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক পাখিদের প্রায় ৯০ শতাংশ সরাসরি প্লাস্টিক দূষণের শিকার। পৃথিবীজুড়ে প্রতি ১১ বছরে প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমান দ্বিগুণ হচ্ছে। আর ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যের সবচেয়ে মারাত্মক শিকার এই পাখিরা। ১৯৬২ সাল থেকে চলমান একটি গবেষণা পুনরাবৃত্তি করে দেখা গেছে অন্যান্য যেকোনো প্রাণীর তুলনায় সামুদ্রিক পাখির পাকস্থলীতে বর্জ্যের পরিমান তুলনামূলক বেশি। তবে পাখিদের মধ্যে অ্যালবাট্রোসের মতো বড় সামুদ্রিক পাখিদের অবস্থা সবচেয়ে ভয়ংকর। সমুদ্র উপকূলে এই পাখিদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে এবং পাখিদের শবদেহ বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য থেকে এটি পরিষ্কার যে, এই পাখিদের একটি বড় অংশ প্লাস্টিক দূষণের শিকার। অন্যদিকে তিমি, হাঙর, কডফিশ কিংবা ম্যাকারেলের মতো বড় সামুদ্রিক প্রাণীদেরও রেহাই নেই। বড় ধরনের প্লাস্টিকের পাশাপাশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভান্ডারে পরিনত হচ্ছে এই মাছেদের পরিপাকতন্ত্র। বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকে পড়ছে। প্রাণী ও মাছের শরীরে ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ সঞ্চিত হয়ে তা খাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। সরাসরি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করছে। প্রতিনিয়ত এই প্লাস্টিক দূষণের ফলে মানুষ ক্যান্সার, অ্যাজমা, অটিজম সহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছে। সমুদ্রে-মহাসমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। এদিকে শিল্পায়ন ও নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে বর্ধিত পরিমানে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে।

২০১৯ সালের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বছরে গড়ে মাথাপিছু প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয় ৫.৭ কেজি। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমান কম হলেও নগরায়নের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে সে পরিমান। কেবল প্লাস্টিক পণ্যের পরিমান নয়, বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারবৈচিত্র্যও বাড়ছে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেবল ঢাকা শহরে উৎপাদিত প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টন বর্জ্যের মধ্যে ৩০ শতাংশ অপচনশীল। আর এই অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্যের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। ফলে দিন দিন বঙ্গোপসাগরে প্লাস্টিক দূষণ বেড়েই চলছে। ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় বাংলাদেশের জলসীমা এখন অনেক প্রসারিত। এ সমুদ্রে রয়েছে অঢেল সম্পদ। এ কারনেই আমরা এখন ব্লু-ইকোনমির (সুনীল অর্থনীতি) কথা ভাবতে পারছি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চাকা কে শক্তিশালী করার জন্য ব্লু-ইকোনমির ধারণা একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা মহামূল্যবান এই সম্পদের প্রতি যথেষ্ট অবহেলা প্রদর্শন করে চলেছি। দেশের বৃহত্তর নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কলকারখানা এবং হোটেলের বর্জ্য ফেলার কারনে দূষিত হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের পানি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দূষণের কারনে উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীও হুমকির মুখে পড়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গায় যেমন দূষণের প্রভাবে অক্সিজেনের মাত্রা কমছে, তেমনি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সমুদ্র উপকূলেও।

এদিকে বর্জ্য ও অন্যান্য পদার্থের ডাম্পিংয়ে সামুদ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ৮৭টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত লন্ডন কনভেনশন। সামুদ্রিক দূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করা, দূষণ প্রতিরোধে বর্জ্য পদার্থ ও অন্যান্য বিষয়গুলির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল ওই কনভেনশনের লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় কনভেনশনের সিদ্ধান্তগুলো আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় লন্ডন প্রটোকল। বাংলাদেশ সহ ৫১টি রাষ্ট্র এতে সই করে। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ থেকে ৫১টি রাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত লন্ডন প্রটোকল কার্যকর হয়। সম্প্রতি, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট, গ্লাস, কাপ, বেলুন স্টিক, কটন বাড, চা-কফিতে চিনি বা দুধ মেশানোর দন্ড ইত্যাদির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা। জলাভূমি, সমুদ্র এবং উপকূল-সৈকতের দূষণ নিয়ন্ত্রণে একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকের উপর এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি টন (২৫ মিলিয়ন টন) প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে অন্তত দেড় লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য মহাদেশের নদ-নদী ও জলাশয়ে গিয়ে জমে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের (৮ এপ্রিল ২০১৯) তথ্য বলছে, প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন পাত্র, পানি ও কোমল পানীয়র বোতল যথেচ্ছ ছুঁড়ে ফেলার প্রবণতা নদী-জলাশয়ের প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম ইন্ধন। অন্যদিকে, সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী প্রধান কয়েকটি দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা তাদের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন করবে।

জাতিসংঘের সমুদ্র সম্মেলনে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সের প্রতিনিধিরা বলেছেন, তারা সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক দূরে রাখার জন্য কাজ করবেন। কিছু কিছু প্রতিশ্রুতি এখনো আনুষ্ঠানিক রুপ পায় নি এবং পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্লাস্টিকের একটি বড় অংশ সমুদ্র থেকে অনেক দূরে তৈরি হয়। বিশেষ করে যেসব দেশে ভোক্তা অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন ঘটেছে কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হয়নি সেখানে এই সমস্যা প্রকট। জার্মানির একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, বিশ্বের মাত্র ১০টি নদীর মাধ্যমে ৭৫ শতাংশ স্থলে উৎপন্ন সমুদ্র দূষণ হয়। এসব নদীর অধিকাংশই এশিয়ায়। এসব নদীতে যদি প্লাস্টিকের পরিমান ৫০ শতাংশ কমানো যায়, তবে সারাবিশ্বে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ ৩৭ শতাংশ কমানো সম্ভব।

উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আমাদের দেশে প্লাস্টিক দূষণ কমানোর লক্ষ্যে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন (এক ধরনের প্লাস্টিক) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাটের ব্যাগের (সোনালি ব্যাগ) মতো পচনশীল পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত করছে। কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার যে হারে ছড়িয়েছে, তাতে এই ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল, বলছেন গবেষকরা। আইন করেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। সেইসাথে পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাবও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন কীভাবে পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে আনা যায়।

তারই ধারাবাহিকতায় আবিষ্কৃত হয়েছে পরিবেশে পচনশীল বায়োডিগ্রেডেবল পলিথিন বা বায়োপ্লাস্টিক। কিন্তু সেই প্লাস্টিক উৎপাদনে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে পরিবেশের উপরও প্লাস্টিকজনিত বর্জ্যের চাপ কমছে না। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য প্রকৃতিকে বাসযোগ্য করে যেতে হলে অবিলম্বে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে, সমুদ্র কিংবা যেকোনো জলাশয় থেকে প্লাস্টিক অপসারনের ব্যবস্থা করতে হবে, বায়োপ্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায়, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমান গিয়ে দাঁড়াবে ১২ বিলিয়ন টনে। ধেয়ে আসা এই প্লাস্টিক দূর্যোগের করাল গ্রাসের কবলে পড়বে পৃথিবী, মানবজাতি এই দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে তো?

লেখক- মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ভূঁইয়া শাহাদত
পরিচালক – রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
প্রেসিডেন্ট-The Lighthouse Foundation Bangladesh

লাইটহাউজ নিউজ ক্লাব

Share
Published by
লাইটহাউজ নিউজ ক্লাব

Recent Posts

ভাষা সৈনিক কয়েস উদ্দিন আর নেই

ভাষা সৈনিক কয়েস উদ্দিন সরকার মারা গেছেন। জামালপুর শহরে নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি মৃত্যুবরণ…

9 months ago

ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস…

9 months ago

আর পরিবর্তন হচ্ছে না বিশ্বকাপের সূচি

আগামী ৫ অক্টোবর ভারতে শুরু হবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে বিশ্বকাপ শুরুর মাসখানেক বাকি…

9 months ago

দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে রাতে মাঠে নামছে রিয়াল

আলমেরিয়ার পাওয়ার হর্স স্টেডিয়ামে শনিবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় লা লিগার ম্যাচে মাঠে নামবে…

9 months ago

হ্যারিকেন হিলারির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে একদিনে এক বছরের সমান বৃষ্টির শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দিকে ধেয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী ‘হারিকেন হিলারি’। ক্যাটাগরি-৪ হ্যারিকেনে রূপ নেওয়া হিলারির প্রভাবে…

9 months ago

‘আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই ক্ষমতায় বসার জন্য বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ নয়,…

9 months ago