মেরিটাইম সংবাদ

সামুদ্রিক পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এবং জলবায়ুর প্রভাব

মেরিটাইম ডেস্ক :  সামুদ্রিক পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এবং জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে সমুদ্রের ঝুঁকি নিয়ে, ইউরোপ জুড়ে পরিবেশ সংগঠনের একটি দল নতুন করে গবেষণা শুরু করেছে।

গবেষণায় দেখা যায় সামুদ্রিক পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অসংখ্য উৎস এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকে আসে।

এতে জলবায়ুর প্রভাব সহ ব্যাপক পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে। যা আসন্ন ইউরোপীয় কমিশনের ২০২১ এর ইইউ গ্রিন সপ্তাহে আগেই প্রকাশিত হয়।

গ্যালওয়ে-মায়ো ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি দ্বারা করা গবেষণাটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎস এবং সমাধানগুলো সন্ধান করেছে।

Seas At Risk এর সিনিয়র মেরিন লিটার পলিসি অফিসার ফ্র্যাডেরিক মঙ্গোদিন বলেন,

“বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রত্যাশিত তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকের এই দূষণ বৃদ্ধি থেকে জরুরীভাবে পরিবেশেকে রক্ষা করা।

যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, বৈশ্বিক বাস্তুতন্ত্র এবং জলবায়ুর উপর নাটকীয় পরিণতি এড়ানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।

কিছু নির্দিষ্ট ধরণের প্লাস্টিক অন্যান্য প্লাস্টিকের তুলনায় প্রচুর মাইক্রোপ্লাস্টিক, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং জিএইচজি ছড়ায়।

তবে, সঠিক ধরণের প্লাস্টিক বাছাই করা এবং ডিজাইনের পর্যায়ে সংযোজনগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণকে মারাত্মকভাবে হ্রাস করতে পারে।”

সমুদ্রের ঝুঁকিপূর্ণ তথ্য উদ্ধৃত করে দেখা যায় যে, ১৯৫০ এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের উৎপাদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

যেখানে এর উৎপাদন ২০০০ সালে ২০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি এসে দাঁড়ায় এবং পরবর্তী ২০১৯ সালে তা ৩8৮ মিলিয়ন টনে এসে পৌছায়।

সামুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক দুষন

গবেষকরা একটি পূর্বাভাস তুলে ধরেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই উৎপাদন ৫০০ মিলিয়ন টন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৫০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যাবে।

গবেষণায় সামুদ্রিক পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উৎসগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়,

ব্যক্তিগত যত্নের পণ্যগুলোতে যুক্ত থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক যেমন, গ্লিটার বা স্ক্রাবগুলোতে পাওয়া মাইক্রোব্যাডস,

তা কেবলমাত্র সামুদ্রিক পরিবেশে ছড়ানোর মোট মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্র দুই শতাংশ।

তাদের দাবি যে সমুদ্রের বেশিরভাগ মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো অজান্তেই মাইক্রোপ্লাস্টিক যুক্ত হয়।

যার বেশির ভাগ টায়ার ডাস্ট, সিনথেটিক টেক্সটাইল ফাইবার, সিটি ডাস্ট এবং মেরিন পেইন্টের মতো উৎস থেকে আসে।

আর সমুদ্রে বড় আকারের প্লাস্টিক আইটেমগুলো অবক্ষয়ের ফলে অতিরিক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক সমূহ, কৃষি, নির্মাণ, পর্যটন, জলে গাছপালা উৎপাদন, মৎস্যজীবন এবং শিপিং সহ বেশিরভাগ অর্থনৈতিক খাত থেকে আসে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সমুদ্রে প্রবেশকারী সমস্ত প্লাস্টিকের ৯৯ শতাংশ সমুদ্র উপকূলের উপরে ছড়িয়ে গেছে।

যেখানে রাসায়নিক, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকগুলোর অবনতি হতে কয়েক শতাব্দী লাগে যাবে, যা সামুদ্রিক জীবন এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক।

জলবায়ু প্রভাব

জিএমআইটি সমীক্ষা বলছে, এই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলো জলবায়ুতেও জড়িত থাকে,

যেখানে উভয়ই জিএইচজিএস নির্গমনে অবদান রাখে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সমুদ্রের প্রশমন প্রভাবকে হ্রাস করে।

নির্দিষ্ট ধরণের প্লাস্টিকগুলো (যেমন, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক এবং প্যাকেজিং) একবার সৌর বিকিরণের সংস্পর্শে আসার পরে তা ধীরে ধীরে অবক্ষয় এবং খণ্ডন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে।

এটি মিথেন এবং ইথিলিনের মতো জিএইচজিএস (GHGs) ছড়ায়।

যেখানে এই মিথেন গ্রিনহাউস গ্যাসের উপর কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়।

২০২৫ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের উৎপাদন ৩৩-৩৬ শতাংশের প্রত্যাশিত বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে, যদি কোনও প্রশমনকরণের প্রচেষ্টা বাস্তবায়ন না করা হয় তবে মিথেনের নির্গমন ১০০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেন গবেষকরা।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাবগুলো সবচেয়ে বেশি পরিবেশগত জীববৈচিত্র্য হ্রাস করতে সাহায্য করে।

যা সামুদ্রিক খাবারের উপর প্রভাব ফেলবে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলবে।

সমীক্ষায় জিএমআইটি গবেষকরা সামুদ্রিক জীবের মাইক্রোপ্লাস্টিক খাওয়া এবং সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের দ্বারা বিপজ্জনক পদার্থের জৈব সংশ্লেষ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তাদের মতে, নির্দিষ্ট ধরণের কিছু প্লাস্টিকের তুলনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক, বিষাক্ত রাসায়নিক বা জিএইচজিএস নির্গমনের পরিমাণ অনেক বেশি।

সুতরাং, সমীক্ষায় প্রস্তাবিত সমাধানে মাইক্রোপ্লাস্টিক রিলিজ প্রতিরোধের লক্ষ্য তারা নির্দিষ্ট ধরণের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তারা আরও বলেছে যে ধীরে ধীরে সর্বাধিক সমস্যাযুক্ত কাপড় এবং সংযোজনগুলো দূর করার জন্য ডিজাইন পর্যায়ে টেক্সটাইলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক ইকো-ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা উচিত।

তারা টায়ার হতে পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়ানো রোধে সর্বাধিক প্রান্তিক স্থাপনেরও প্রস্তাব দেয়।

সামুদ্রিক পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ এবং জলবায়ুর প্রভাব এর সমীক্ষায় বলা হয় যে, দীর্ঘমেয়াদে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ কমাতে সমস্ত অ-অপরিহার্য একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা উচিত।

আরোও পড়ুন…

সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের হটস্পট

লাইটহাউজ নিউজ ক্লাব

Share
Published by
লাইটহাউজ নিউজ ক্লাব

Recent Posts

ভাষা সৈনিক কয়েস উদ্দিন আর নেই

ভাষা সৈনিক কয়েস উদ্দিন সরকার মারা গেছেন। জামালপুর শহরে নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তিনি মৃত্যুবরণ…

8 months ago

ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস…

9 months ago

আর পরিবর্তন হচ্ছে না বিশ্বকাপের সূচি

আগামী ৫ অক্টোবর ভারতে শুরু হবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে বিশ্বকাপ শুরুর মাসখানেক বাকি…

9 months ago

দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্যে রাতে মাঠে নামছে রিয়াল

আলমেরিয়ার পাওয়ার হর্স স্টেডিয়ামে শনিবার (১৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টায় লা লিগার ম্যাচে মাঠে নামবে…

9 months ago

হ্যারিকেন হিলারির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে একদিনে এক বছরের সমান বৃষ্টির শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দিকে ধেয়ে যাচ্ছে শক্তিশালী ‘হারিকেন হিলারি’। ক্যাটাগরি-৪ হ্যারিকেনে রূপ নেওয়া হিলারির প্রভাবে…

9 months ago

‘আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিই ক্ষমতায় বসার জন্য বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ নয়,…

9 months ago