সাগর মোহনায় ভাসমান দোকান!

প্রকাশিত: ৪:১৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২০

সাগরে ভাসার আগে রসদের জোগাড় হয়, জলেভাসা দোকান থেকে। দেশের স্থলভাগের শেষ সীমানায় থাকা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় এ রকমই একটি ভাসমান দোকান থেকে খাদ্য-জ্বালানিসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন সমুদ্রগামী জেলেরা।
এটি স্থলপথের কোনো হাটবাজার কিংবা অলিগলির দোকান নয়, সাগর মোহনায় ভেসে চলা দোকান! ভেসে ভেসেই চলে দোকানের বেচাকেনা। দিন গড়িয়ে রাত নামলেই জমে বেশি। কারণ রসদ ফুরালেই ভিড় জমায় সাগরের মাছ শিকারী জেলেরা। তারাই এ দোকানের মূল ক্রেতা। উপজেলা সদর থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করে সোনারচর ও কলাগাছিয়াচরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগর মোহনায় গেলে এ দোকানের দেখা মিলবে। তবে দূর থেকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। কাছে গিয়ে ট্রলারের ভেতরে ঢুকলে একেবারেই স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপের দোকানটি চোখে পড়বে। কি নেই সেখানে? চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, শুকনো খাবার থেকে শুরু করে গ্যাস সিলিন্ডারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে। আছে খাবার স্যালাইন এবং ওষুধপত্রও।
ভাসমান এ দোকানের ক্রেতা শুধু জেলেরাই নয়, নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট সোনারচর সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও আসেন এখানে। ঢেউয়ের তালে দুলতে দুলতে খাবারসহ নানা সামগ্রী কিনে থাকেন পর্যটকরা। সম্প্রতি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে সোনারচর যাওয়ার পথেই যুগান্তরের এ প্রতিবেদকের চোখে পড়ে ভাসমান দোকানটি। এ সময় দেখা যায়, দু’তিনটি ট্রলার নোঙর করে প্রয়োজনীয় রসদ কিনছে ভাসমান দোকান থেকে। এরমধ্যে দুটি ট্রলার জেলেদের, আর একটি পর্যটকদের। সাগরে মাছ শিকারী জেলেরা জানায়, একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের ভেতরে স্থলপথের দোকানগুলোর মতোই সাজিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য বিক্রি করা হয় ওই দোকানে। প্রায় দুই বছর ধরে সমুদ্র মোহনায় ভাসমান দোকানটি চলছে।
কথা হয় সাগরের জেলে শাহবুদ্দিন মোল্লার সঙ্গে। তাদের ট্রলারের রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ভাসমান দোকানে এসেছেন তিনি। শাহবুদ্দিন বলেন, ‘সাগরে নামার সময় সদাই (রসদ) কেনা লাগে। সাগরে থাকতেও সদাই লাগে। মাঝেমাঝে তেল ফুরাইয়া যায়। কূলে আওন যায় না। তহন আমাগো এই দোকানই ভরসা।’ সোনারচর ঘুরতে আসা পর্যটক হানিফ মাহমুদ বলেন, ‘তাদের ট্রলারের তেল ও খাবার শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। জেলেদের কাছে সহযোগিতা চাইলে তাদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ভাসমান এ দোকানের খবর। পরে ভাসমান দোকানে এসে ন্যায্যমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে স্বস্তি মেলে তাদের।’ ভাসমান এ দোকানের উদ্যোক্তা জিয়া ফরাজী বলেন, ‘সাগরে গিয়ে অনেক সময় জেলে ট্রলারের রসদ ফুরিয়ে যায়। তেল শেষ হয়ে যায়, খাবার শেষ হয়ে যায়। তখন বিপদে পড়েন জেলেরা। প্রথমে আমার জেলেদের জন্য ছোট্ট পরিসরে কাজটি শুরু করি। পরে চাহিদা বাড়লে সব জেলের জন্য একটি স্টিলবডির ট্রলারে দোকানটি চালু করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দোকানের মালামাল শেষ হয়ে গেলে চরমোন্তাজ স্লুইস বাজারে ট্রলার নিয়ে গিয়ে মালামাল আনি।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিয়া ফরাজী ছাড়াও এক বছর ধরে আরও একটি ভাসমান দোকান সেখানে চলছে। জেলেরা বলছেন, সোনারচর ও কালাগাছিয়ার পাশাপাশি উপজেলার আরও যেসব জলসীমা রয়েছে; সেখানেও জেলেদের সুবিধার্থে ভাসমান দোকান চালুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘ভাসমান দোকানের উদ্যোগটি ব্যতিক্রম। ওই উদ্যোক্তাকে সাধুবাদ জানাই।’
লেখক- মুস্তাক আহমেদ
মার্চেন্ট মেরিনার।