টেকসইযােগ্য মহাসাগরের জন্য উদ্ভাবন এবং সচতেন নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ৯:৫৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২০

নাগরিক দায়বদ্ধতায় গত ২৫শে মে ২০২০ইং ছিল আফ্রিকান ইউনিয়ন দিবস। আফ্রিকান ইউনিয়নের দুইটি সদস্য প্রতিষ্ঠান Ocean Ambassador Foundation ও WIMA, Nigeria এর আমন্ত্রণে আমি ও শামিম হাসান সাব্বির বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে গত ২৫ ও ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে তাদের দ্বারা পরিচালিত জুম সম্মেলনে
অংশগ্রহণ করেছিলাম। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলাে “টেকসই যােগ্য মহাসাগরের জন্য উদ্ভাবন। আমরা অনেকই হয়তো জানি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন নীতিমালার লক্ষ্য সমূহ প্ৰকৃতভাবে অর্জনের জন্য আগামী ১০ বছর কে জাতিসংঘ কর্ম সম্পাদনের দশক” বা “Decade of Action” হিসাবে ঘােষণা করেছে। এই ঘােষণার সাথে সাথে জাতিসংঘ ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক সকল স্তরে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছে।এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে আমরা নিজ নিজ সক্ষমতায় বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের
বাস্তবিক প্রয়ােগ ও তার ফলাফল বৈশ্বিক পরিমন্ডলে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। প্রথমত আমরা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মধ্যে পার্থক্য অনুধাবনের মাধ্যমে প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তি যে জাতিসংঘ ঘােষিত কর্ম সম্পাদনের দশকে অংশ নিতে পারে সেই ধারণাটা পরিস্কার করতে সচেষ্ট হয়েছি। আবিষ্কার হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু খুজে করার উদ্ভাবন হচ্ছে আবিস্কৃত কোন বিষয়কে নিজস্ব সূজনী শক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে সকলের কাছে উপস্থাপন করা। এই ক্ষেত্রে নিজ কর্মজ্ঞান দ্বারা একজন জেলে বা তাতী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি যে কেউই তার নিজস্ব বাস্তৰ অভিজ্ঞতার আলােকে উদ্ভাবনী ধারণ প্রদান করতে সক্ষম। তাই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির সহযােগিতায় ছােট ছােট যে কোন উদ্ভাবনী ধারণার প্রয়োগই পারবে আগামী দশ বছরের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন নীতিমালার লক্ষ্য সমূহ অর্যন করতে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা মানব সুষ্ট বিভিন্ন চাপের কারণে সামুদ্রিক পরিবেশের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরেছি। ইহা বর্তমানে স্বীকৃত যে মানবজাতির উচ্চাভিলাষী মন্যেভাব ও আগ্রাসী অর্থনেতিক কর্মকান্ডের কারণে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এর প্রেক্ষিতে টেকসই সামুদ্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্ভাবনী ধারণার প্রয়ােগের আশু প্রয়ােজনীয়তা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে পূর্বের যে কোন সময়ের থেকে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ সমুদ্রতীরে ক্রমাগত নগরায়ন, প্লাষ্টিক বর্জ্যের বিরূপ প্রভাব, জীবাশজালানীর অধিক ব্যবহারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে প্রবাল প্রাচীরের মত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পরিবেশের হুমকির মুখে পতিত হওয়া ও গভীর সমুদ্রতলদেশের সম্পদ আহরণের অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযােগিতার মত বিষয় সমূহ উল্লেখযােগ্য। এই সকল বিষয় সমূহ বিবেচনা করে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছে যে, সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য দ্রুত ফিরিয়ে আনতে মানবজাতিকে তাদের দৈনন্দিন অনেক কার্যক্রম টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনার আলােকে পরিচালিত করতে হবে। যেহেতু এই ক্ষেত্রে সকল স্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার প্রয়ােজন রয়েছে, সেহেতু ব্যাপক জন সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সকলকে উদ্ধ করার কোন বিকল্প নাই।

এরই বাস্তবতায় জুম সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের নৌ-পেশায় নিয়ােজিত পরবর্তী প্রজনের জনগােষ্টির প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ কিভাবে সমাজের কিছু অংশের মাঝে তাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডকে টেকসইভাবে পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি তা বৈশ্বিক পরিমন্ডলে তুলে ধরেছি। এর মধ্যে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক বােতলের ব্যবহার হাসে উৎসাহ প্রদান, স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান আয়ােজন ও হাতে কলমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শিক্ষা ও শিক্ষামূলক মঞ্চনাটক উপস্থাপন উল্লেখ যােগ্য। উদ্ভদ্ধকরণ প্রচেষ্টার প্রত্যক্ষ উদাহরণ স্বরূপ শামিম হাসান সাব্বির তার নিজ উদ্যোগে “বিগ ব্ ওশেন সাসটেইনেবিলিটি” নামক সংগঠন তৈরি ও তার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মাঝে তুলে ধরে।

যদিও ব্যক্তিপর্যায়ে গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ ক্ষুদ্র প্রয়াস মনে হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ আমরা জানি বিন্দু বিন্দু জল থেকেই বিশাল সিন্ধুর সৃষ্টি। এই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাসমূহ বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহিত বিভন্ন পদক্ষেপ বাস্তব ক্ষেত্রে কিভাবে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে পারে তা প্রমান করতে সক্ষম হয়েছি।

তাই আসুন আমরা সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসি। এর মাধ্যমে সকলের সম্মেলিত প্রচেষ্টায় সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণের স্থায়িত্বের পাশাপাশি আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হব।

লেখক: ক্যাপ্টেন মােহাম্মদ ফিরোজ মোস্তফা মাস্টার মেরিনার, জেনেরাল সেক্রেটারি ওশান সাসটেন্টেনেবিলিটির ক্লাব।