তিনটি সমুদ্র বন্দরসহ উপকূলীয় এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিপর্যয়ের কবলে

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাটি মেঘনায় নাব্যতা সংকটে বরিশাল-লক্ষীীপুর-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ভোলা ও লক্ষীপুরের মধ্যবর্তী ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট নৌ-পথে ফেরি চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। প্রায় ২২ কিলোমিটার দুরত্বের উপমহাদেশের সর্বাধীক দুরত্বের এ ফেরি রুটের কয়েকটিস্থানে মেঘনার ডুবো চরের কারনে ফেরি চলাচল অনেকটাই জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি ও যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে এখন প্রায় ২৫ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামের সাথে লক্ষীপুর-ভোলা-বরিশাল হয়ে মোংলা ও খুলনা পর্যন্ত সড়ক পরিবহন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। এতেকরে দেশের তিনটি বিভাগ ছাড়াও চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের মধ্যেও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহনের চাঁপ বেড়েছে চট্টগ্রাম-ঢাকা ও খুলনা মহাসড়কের ওপর।

সূত্রমতে, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্যোগে ইলিশা ঘাট থেকে মজুচৌধুরীর হাট ফেরি ঘাট পর্যন্ত হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সার্ভের ভিত্তিতে পাইলটেজ ও কনজার্ভেন্সী বিভাগ থেকে দিবারাত্র ফেরিসহ সবধরনের নৌযানের চলাচলের বিষয়টি নিরাপদ রাখতে বয়া, বিকন ও মার্কাসহ লাইটেড বয়া স্থাপন করা হয়েছে।

অপরদিকে ওই ফেরি রুট ব্যবহারকারী বরিশাল ও চট্টগ্রামের একাধিক ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালকরা নানা দূর্ভোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে এখন লক্ষীপুরে এসে মেঘনা পাড়ি দিয়ে ভোলা থেকে ভেদুরিয়া-লাহারহাট ফেরি পার হয়ে বরিশালে পৌঁছতে তাদের কমপক্ষে এক সপ্তাহ লেগে যায়। অথচ এ সড়ক পথের দুরত্ব আড়াইশ’ কিলোমিটারেরও কম।

এসব অব্যবস্থার কারণে দেশের অত্যন্ত সম্ভবনাময় মাত্র আড়াইশ’ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে এখন নিত্য দূর্ভোগ সব সম্ভবনাকে ম্লান করে দিচ্ছে। এ মহাসড়ক ব্যবহার থেকে ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পন্যবাহী যানবাহনের চালকগণ। এমনকি এসব কারণেই তিনটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে অদ্যবর্ধি কোন যাত্রীবাহী যানবাহনও চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ এ জাতীয় মহাসড়কটির ওপরই দেশের উপকূলীয় তিনটি বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বাহুলাংশে নির্ভরশীল।

তারা আরও জানান, মেঘনায় নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুটে নাব্যতা সংকটে দুরত্ব বৃদ্ধি ছাড়াও মাত্র তিনটি কে-টাইপ ফেরি চলাচল করায় সব যানবাহনকে দিনের পর দিন ঘাটে আটকা থাকতে হচ্ছে। বরিশাল ও ভোলার মধ্যবর্তী ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ লাহারহাট ও ভেদুরিয়া রুটে পাঁচটি ইউটিলিটি ফেরি থাকলে চলাচল করছে চারটি। এমনকি রাতের বেশীরভাগ সময়ই এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌপথটি দেখাশোনাকারী বিআডব্লিউটিএ’র দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ইলিশা থেকে মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত নৌযান চলাচলে নির্বিঘœ রাখতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। তবে ইলিশা ফেরি ঘাটের সামনে চর অপসারন অপাতত সম্ভব নয়; বিধায় প্রায় তিন কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে ফেরিসহ অন্যসব নৌযানের চলাচল নির্বিঘœ রাখতে আমরা নতুন নৌপথ চিহ্নিত করে সবধরনের নৌ-সংকেত ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। তবে এতে কওে নৌপথটির দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার থেকে এখন ২৫ কিলোমিটার হয়েছে বলেও ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ভাটি মেঘনার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাটের সামনে বিশাল এলাকা জুড়ে ডুরো চরের কারণে ফেরিসহ সবধরনের নৌযানকেই প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে পল্টুনে ভিড়তে হচ্ছে। এমনকি ওই নৌপথের মেঘনা বক্ষের আরো কয়েকটিস্থানেও নাব্যতা সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।