নীল সমুদ্রে দিনদিন বাড়ছে লাল-সবুজের পতাকার দাপট

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে যখন বিশ্ব-বাণিজ্যে মন্দা এমনি সময়ে নীল সমুদ্রে বাড়ছে লাল-সবুজের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ। করোনাকালে বিশ্বব্যাপী এই মন্দা; সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে যেন বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দিয়েছে।২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত গভীর সমুদ্রের চলাচলের উপযোগী বৃহৎ ১৬ টি জাহাজ ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো দুটি জাহাজের রেজিস্ট্রেশন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা রেকর্ড।

২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কমতে থাকে। কিন্তু চলমান মহামারী এবং রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে করমুক্তিসহ নতুন আইন বাস্তবায়নের প্রভাব পড়ছে এই খাতে। মুখ ফিরিয়ে নেয়া বিনিয়োগ আবার ফিরে আসছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশে সাগরে যাওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল ৭২ টি। কিন্তু ২০১৮ সালে এই সংখ্যা কমে হয় মাত্র ৩৬ টি।

মহামারী পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে সেকেন্ড হ্যান্ড কার্গো জাহাজের দাম প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছে। আর এই সুযোগ নিচ্ছে বাংলদেশি ব্যাবসায়ীরা। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলি সাধারনত ৫-২০ বছরের পুরাতন ৫০,০০০-৬০,০০০ ডেড ওয়েট টনেজ এর জাহাজ ক্রয় করে থাকে যার মূল্য $১২-$১০ মিলিয়ন ডলার। মহামারীর শুরু থেকে এই ধরনের জাহাজের দাম কমে $৬-$৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সারাবিশ্বে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাবসা বাণিজ্যের মন্দায় এই খাত যেমন ধুকছে এর বিপরীতে সুযোগ কাজে লাগিয়ে গতি ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের এই খাত।

ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং এর ভাষ্য মতে, Bangladesh Flag Vessels (Protection) Act 2019 ব্যাবসা বান্ধব হবার কারনে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে।

এই আইনে ১৯৮২ সালের Bangladesh Flag Vessels (Protection) Ordinance এর দূর্বলতা কে কাটিয়ে তুলে এই খাত বিকাশে বাধাগুলি দূর করা হয়েছে। এই আইনে ৫০০০ ডেড ওয়েট টনেজের বেশি জাহাজের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে চালু হওয়া এই আইনের পর ২০১৯ সালেই ১১ টি জাহাজ রেজিস্ট্রেশন নেয়। আর এই বছর প্রথম আট মাসে এই সংখ্যা ১৬ টি। আরো দুটি জাহাজ রেজিস্ট্রেশনের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে রেজিস্ট্রেশন কার্য মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার ভেতর সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

বাংলাদেশের প্রায় $৯০ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধিকাংশ হয় সমুদ্রকে ঘিরে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে পণ্য পরিবহন উপযোগী বাংলাদেশের পপতাকাবাহী জাহাজের অভাবে শুধুমাত্র ফ্রেইট চার্জ বাবদ বাংলাদেশকে ব্যয় করা লাগে $৯ বিলিয়ন ডলার। আমরা এই খাতে চাহিদার মাত্র ১০%-১৫% দেশীয় জাহাজ দিয়ে মেটাতে পারি। সমুদ্রগামী জাহাজ খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিশাল। চাইলে আমরা এই $৯ বিলিয়ন ডলার দেশেই রাখতে পারি এই খায়ে জাহাজের সংখ্যা বাড়িয়ে। এতে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে নতুন প্রায় ৬০,০০০ মানুষের। সেই সাথে অতিরিক্ত $৪ বিলিয়ন ডলার আয় করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পানামার মত ছোট দেশের অর্থনীতি শুধু এই জাহাজকে ঘিরেই এগিয়ে গেছে।