আগামী মে মাস থেকেই পুরোদমে জাহাজ ভিড়া শুরু হবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে

প্রকাশিত: ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২০
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর কক্সবাজার মাতারবাড়ীতে নির্মিত হবে ২০২৫ সালে কিন্তু তার আগেই সেখানে নির্মিতব্য বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য নির্মিত তিনটি জেটি এবং জাহাজ প্রবেশের চ্যানেল বা পথ বুঝে পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ডিসেম্বরের মধ্যেই জেটি এবং ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল বুঝে পাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই চ্যানেল দিয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মান সামগ্রী নিয়ে জাহাজ প্রবেশ করবে। সেই জাহাজ ভিড়বে জেটিতে গিয়ে। এরমধ্য দিয়ে মাতারবাড়ীতে প্রথম জাহাজ ভিড়া শুরু হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ জাফর আলম লাইট হাউজ নিউজ ক্লাবকে  বলেন, ডিসেম্বরে বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মান সামগ্রী নিয়ে জাহাজ প্রবেশ করবে এবং বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য নির্মিত জেটিতে পণ্যবাহি জাহাজ ভিড়বে। তবে ২০২১ সালের মে মাসে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দেড়শ মিটার প্রস্থ চ্যানেলটি আমাদের হস্তান্তর করবে নির্মানকারী জাপানী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু এটি বন্দর জলসীমার আওতার মধ্যে পড়ে তাই মাতারবাড়ী বিদ্যুত কেন্দ্রের জেটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে মে মাস থেকেই পুরোদমে চ্যানেলে জাহাজ ভিড়া শুরু হবে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান প্রকল্পের  পরিচালক জাফর আলম বলছেন, এখন কিছুটা কম থাকলে ২০২১ সালে যখন আমরা চ্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পাবো তখন এর গভীরতা হবে সাড়ে ১৮ মিটার। আর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সালে। কিন্তু আমরা এমনভাবে পরিকল্পনা করছি যাতে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বন্দরের কার্যক্রম ২০২৫ শেষ হয়।
জাফর আলম বলেন, ‘কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান জাপানের নিপ্পন কোয়ে কম্পানি আগামী ১০ মাসের মধ্যে প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন জমা দেবে। এরপর দরপত্র ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করতে ২০২১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা চাই ২০২১ সালেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। আমরা চাইছি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রথম ধাপের বন্দর নির্মাণ শেষ করতে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জাপানের জাইকা ঋণ বাবদ দেবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে আসবে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্থায়ন করবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে অন্যান্য কাজের সঙ্গে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনবিশিষ্ট সড়ক; যেটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত করবে।

উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বন্দরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কারণে বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল জেটিতে ভিড়তে পারে না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার বা ছোট জাহাজে কনটেইনারভর্তি রপ্তানি পণ্য নিয়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, কলম্বো ও তানজুম পেলিপাস বন্দর হয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় যেতে হচ্ছে। তখন ইউরোপের যেকোনো বন্দর থেকে সরাসরি জাহাজ মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে। আর মাতারবাড়ী থেকে যেকোনো জাহাজ পণ্য নিয়ে আমেরিকার কোনো বন্দরে যেতে পারবে।

সরকারের যুগ্ম সচিব জাফর আলম বলছেন ‘মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ছোট ফিডার জাহাজে কনটেইনার পণ্য সাগর-নদীপথে মোংলা, পায়রা বন্দর পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে পরিবহন হবে। আর সড়কপথে মাতারবাড়ী থেকে চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে দেশের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছতে পারবে। এ জন্য মাতারবাড়ী-চকরিয়া ২৭ কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, মাতারবাড়ীর সঙ্গে চকরিয়া পর্যন্ত রেল সংযোগ নির্মিত হবে; যেটি কক্সবাজার-দোহাজারী-চট্টগ্রাম ডুয়াল রেললাইনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। আমরা বহুমুখী যোগাযোগের সব ব্যবস্থাই রাখছি; যাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ি।’

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের ডিটেইল ডিজাইন তৈরি, জেটি ও ইয়ার্ড ডিজাইন তৈরি করা এবং প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কেও তারা প্রতিবেদন দেবে। এরপর প্রকল্পের দরপত্র ডকুমেন্ট তৈরি, যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন তৈরি। ঠিকাদার নিয়োগ এবং সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষ করেও এক বছর প্রকল্পের কারিগরি দিক তদারকি করবে। এ জন্য কনসালট্যান্ট খরচ হচ্ছে মোট ২৩৪ কোটি টাকা।

টাকা কোত্থেকে আসবে জানতে চাইলে জাফর আলম বলেন, ‘জাপান আমাদের কনসালট্যান্সি খরচ বাবদ পুরো টাকাই দশমিক ১ শতাংশ সুদে ঋণ হিসেবে দেবে। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডের পর পরবর্তী ২০ বছরে আমরা ঋণের টাকাটা পরিশোধ করব।