কক্সবাজারের একাধিক ইউনিয়নের হাজারো মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৩

কক্সবাজারে বন্যা কবলিত চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এসব ইউনিয়ন সংলগ্ন বেড়িবাঁধের স্লুইচ গেইট বন্ধ রাখার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, প্রভাবশালী একটি চক্রের চিংড়ি ঘের রক্ষায় এসব স্লুইচ গেইট কোনভাবেই খোলা যাচ্ছে না। তবে এ স্লুইস গেইট বন্ধ রাখার বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে রাজী নন। এমনকি প্রভাবশালী চক্রের নামও প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে।

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, ‘চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এখন ১৫টি ইউনিয়নের পানি নেমে গেলেও এখনো বদরখালী, ঢেমুশিয়া ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পানিতে ডুবে আছে। মূলত বঙ্গোপসাগরের উপকূলের বেড়িবাঁধের ৫টি স্লুইস গেইট বন্ধ থাকার কারণে পানি নামতে পারছে না।’

নুরে হোছাইন আরিফ বলেন, ‘মূলত সরকারি এসব জলমহাল ইজারার মাধ্যমে ভোগদখল নিয়েছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি। এসব জলমহাল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে চিংড়ি ঘের। সেখানে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আর এই সিন্ডিকেটের লোকজনের চিংড়ি ঘেরের মাছ রক্ষায় স্লুইস গেইটগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম বলেন, ‘স্লুইস গেইট বন্ধ থাকায় পানি চলাচল বন্ধ থাকার কারণে চকরিয়ার কিছু এলাকা এখনও পানিবন্দি। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ইউএনওসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকটি স্লুইস গেইচ খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই গেইটগুলো বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অবহিত করছেন।

চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার খুলে দেওয়া কয়েকটি স্লুইস গেইট আবারও বন্ধ করার খবর নানা মাধ্যমে তিনিও পেয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে একই কারণে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, শিলখালী ইউনিয়ন ও উজানটিয়া ইউনিয়ন এখনো পানিবন্দি রয়েছে। সেখানেও চিংড়ি ঘের রক্ষায় স্লুইস গেইটগুলো বন্ধ রাখার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘স্লুইস গেইটগুলো দেখভালের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর এই গেইটগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশক্রমে এসব কমিটি গঠন করা হয়েছিল।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, ‘চকরিয়া উপজেলার স্লুইস গেইটগুলো তার কার্যালয়ের আওতাধীন। তবে পেকুয়া উপজেলার পানিবন্দি থাকা এলাকার স্লুইস গেইটগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান কার্যালয়ের অধীন। আর স্লুইস গেইটগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয়ভাবে কমিটি রয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে এসব কমিটি করা হয়েছে।’

স্লুইস গেইট খুলে দেওয়া না দেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির বলে মন্তব্য করেন পাউবো’র নির্বাহী কর্মকর্তার।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা পেলে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য শুধু স্লুইস গেইট নয়; প্রয়োজনে বেড়িবাঁধও কাটা হবে। এতে কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।’

অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার-০৪ আসনের (চকরিয়া ও পেকুয়া) সংসদ সদস্য জাফর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোন ধরণের সাড়া না দেওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।