বে অফ বেঙ্গলের বাংলাদেশ জলসীমায় ১০ মাসে তিনবার জলদস্যুর ঘটনা

প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০
লাইট হাউজ ফাইল ফোটো

নিজস্ব সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় আসা বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি-দস্যুতার ঘটনা ২০১৯ সালে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। দস্যুতার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। মুলত দস্যুতা প্রতিরোধে বেশ কিছু কৌশল বাস্তবায়নের ফলেই সেই সুফল এসেছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর ১০ মাসে বন্দর জলসীমায় তিনটি দস্যুতার ঘটনা রেকর্ড হয়েছে।

বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ ২০২০ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর শফিউল বারি থাকাকালীন চুরি-দস্যুতার ঘটনা রেকর্ডে নতুন কৌশল নেওয়ায় এই সফলতা এসেছিল। আগে বাংলাদেশমুখি কোন জাহাজ বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকালে অর্থ্যাৎ চলার পথে সাগরে জাহাজে চুরি-দস্যুতা ঘটার পর জাহাজ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পৌঁছে অভিযোগ করত। ফলে দোষটা আমাদের ওপর পড়ত। নতুন নিয়মে যেকোনো বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে চুরির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ প্রমাণসহ তা অবহিত করার নিয়ম চালু হয়। এরপর কোস্ট গার্ড তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পরই সেই অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছিল। এরফলে কেউ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার সুযোগ না পাওয়ায় সফলতা এসেছিল। কিন্তু ২০২০ সালের প্রথমদিকে তিনটি দস্যুতার ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

রিক্যাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বিগত ১২ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালেই কেবল দস্যুতার ঘটনা শূন্যে নেমেছে। এর আগে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ২১টি, ২০১১ সালে ১৪টি, ২০১২ সালে ১২টি, ২০১৫ সালে ১০টি, ২০১৬ সালে একটি, ২০১৭ সালে ১১টি এবং ২০১৮ সালে ৯টি দস্যুতা-চুরির ঘটনা ঘটে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত তিনটি ঘটনা রেকর্ড করেছে রিক্যাপ। এই সময়ে ভারতে ঘটনা ঘটেছে ৮টি; ইন্দোনেশিয়ায় ঘটেছে ১৮টি; ফিলিপাই্নে ১৩টি; মালয়েশিয়াতে দুটি ঘটনা ঘটেছে। আর সবচেয়ে বেশি ২২টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা প্রণালিতে

প্রতিবেদন মতে, ২০১৯ সালে এশিয়াজুড়ে বিভিন্ন দেশের জলসীমায় ৮২টি ঘটনা রেকর্ড করেছে রিক্যাপ। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর সবচেয়ে বেশি ৩১টি দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর-মালাক্কা প্রণালিতে। ইন্দোনেশিয়ায় ঘটেছে ২৩টি; যদিও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। প্রতিবেদন মতে, ভারতে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি, যা ২০১৮ সালের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় আটটি, ফিলিপাইনে ছয়টি ও ভিয়েতনামে দুটি ঘটনা ঘটেছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, দেশের বহির্নোঙর ও জলসীমায় আসা জাহাজে চুরি-দস্যুতা-ডাকাতির ঘটনা বাড়লে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পণ্য পরিবহনে বাড়তি জাহাজ ভাড়া আরোপ করে বিদেশি জাহাজ মালিক ও শিপিং লাইনগুলো; এতে বিপাকে পড়তে হয় দেশীয় আমদানি-রপ্তানিকারকদের। আর বাংলাদেশমুখী রুটে জাহাজ ভাড়া দিতে চায় না বিদেশি জাহাজ মালিকরা। ১২ বছরের মধ্যে গতবছর এই প্রথম উদ্বেগ কাটিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষ দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা সাড়ে সাত নটিক্যাল মাইল থেকে বেড়ে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত হয়েছে। বহির্নোঙরে সাগরের সীমানা সীতাকুণ্ড থেকে বেড়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া হয়ে সোনাদিয়া পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে পুরো জলসীমা চুরি-দস্যুতামুক্ত রাখা বন্দরের জন্য এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।