সমুদ্রে ওরা কারা??

প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২০

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , বঙ্গবন্ধু কন্যার একটা স্বপ্নের প্রজেক্ট ওশানোগ্রাফি বা সমুদ্রবিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ধারাবাহিক ভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রথমে মিয়ানমার (২০১২ সালে) ও পরে ভারতের (২০১৪ সালে) সাথে আমরা সমুদ্র বিজয় অর্জন করি। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রারম্ভিক দিক থেকে (মহান স্বাধীনতার পর পর) সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে অবদান রেখেছে যার হাত ধরে কক্সবাজারে সমুদ্রবিজ্ঞান (ওশানোগ্রাফি) গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় সরকারি ইনস্টিটিউট হিসেবে চলমান বর্তমানে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় যে নির্দেশনা ছিল তা হল ব্লু-ইকোনমি (সমুদ্র বা ওশান ভিক্তিক সুনীল অর্থনীতি) ডেভেলপমেন্ট এবং সেই নির্দেশনা মোতাবেক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ অনুমিতক্রমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সমুদ্রবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ওশানোগ্রাফিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি শুরু করে । সমুদ্রবিজ্ঞান গ্রাজুয়েটের পাশাপাশি ২০১৭ সাল থেকে ওশানোগ্রাফিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারী গ্রাজুয়েট বের হচ্চে । এছাড়াও দেশের অন্যান্য কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও চালু করা হয়েছে ওশানোগ্রাফিতে পাঠ দান। সেখানে বেশীরভাগ ওশানোগ্রাফি বিভাগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটরা দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। এমন কি বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল ট্রেনিং, কারিগরি কোর্স সম্পন্ন করা হচ্ছে সমুদ্রবিজ্ঞান ও ওশানোগ্রাফি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদক্ষ অধ্যাপকদের নেতৃত্বাধীন ।

সমগ্র দেশ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্লু-ইকোনমির স্বপ্ন বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অগ্রসর হচ্ছে সেখানে নব্য প্রতিষ্ঠা হওয়া খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপথে যাত্রার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে । খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২৪/০২/২০২০ তারিখে ওশানোগ্রাফি বিভাগ শুরুর তাগিদে শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার প্রকাশ করে। আগামী ০৪/১০/২০২০ তারিখ নিয়োগের পরীক্ষার তারিখ নির্দিষ্ট করে।

বিজ্ঞপ্তিতে সংলিষ্ট বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স চাওয়া হয়েছে। আমাদের ৫/৬ জন গ্রাজুয়েট বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক সকল শর্ত মেনে অ্যাপ্লাই করেছিল।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও থেকে এখন পর্যন্ত ওশানোগ্রাফি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করা গ্রাজুয়েট বের হয়নি।

অন্তত দু:খের সাথে বলতে হয় তারা সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান ও ওশানোগ্রাফি বিভাগের গ্রাজুয়েটদের এই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করতে কোন এডমিট কার্ড ইস্যু করেনি এবং কারণ হিসেবে বলছেন এখানে কৃষিবিদ এর সনদ না থাকার কারনে তাদের নেওয়া হচ্ছেনা।

একজন শিক্ষার্থী যখন কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করেন তিনি হন কৃষিবিদ কিন্তু উনারা সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি বিভাগ কিভাবে কৃষিবিদ দিয়ে যাত্রা শুরু করবেন তা আমাদের বোধগম্য নই। সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি পড়ে একজন শিক্ষার্থী সমুদ্র গবেষক বা সমুদ্রবিজ্ঞানী হবেন এটা ই স্বাভাবিক। এভাবে বিপথগামী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত দেশের সমুদ্রবিজ্ঞান শিক্ষাকে ব্যহত করবে ও সমুদ্র গবেষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির করবে।

তাই অনতি বিলম্বে সমুদ্র বিজ্ঞান ও ওশানোগ্রাফি ডিগ্রীধারী গ্রাজুয়েটদের যথাযথ মূল্যায়ন করে সমুদ্রবিজ্ঞানী দিয়ে সমুদ্র গবেষণা বিভাগ (ওশানোগ্রাফি) চালুর কার্যকরী পদক্ষেপ আশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ব্লু-ইকোনমি প্রজেক্টের অন্যতম অধ্যায় সমুদ্রবিজ্ঞান ও ওশানোগ্রাফি গ্রাজুয়েট সৃষ্টি করা, সেটার জন্য আপনার/আপনাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ/হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

লেখক.

ডঃ মোহাম্মাদ মোসলেম উদ্দিন, চেয়ারম্যান, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়