“সমুদ্র নির্ভর টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র সচেতন সমাজ গঠনের কোন বিকল্প নাই”

প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২০

World Ocean Day 2020 theme: Innovation for Sustainable Ocean

বিশ্ব সমুদ্র দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য : টেকসই সমুদ্রের জন্য উদ্ভাবন

“সমুদ্র নির্ভর টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্র সচেতন সমাজ গঠনের কোন বিকল্প নাই”

সারা পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় শতকরা ৭১ ভাগের ও বেশী পানি আর মোট পানির ৯৭ভাগের ও বেশী হল লবণাক্ত পানি বা সমুদ্র, সাগর ও মহাসাগর। বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীতে সমস্ত জীবন আর জীবিকার মুলে ই রয়েছে সমুদ্র। যে অক্সিজেন আমাদের বেঁচে থাকার অদ্বিতীয় গ্যাস, তার ৫০ভাগের ও বেশীর যোগান দাতা হল সমুদ্রের ক্ষুদ্র ফাইটোপ্লাংটন ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ। সাগর- মহাসাগরকে বলা হয় তাই পৃথিবীর ফুসফুস।

এছাড়া আমাদের খাদ্য, চিকিৎসার কাঁচামাল, জ্বালানী, দামি খনিজ পদার্থ, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন জোয়ার ভাটা, স্রোত ও ঢেউ, যাতায়াত ও পন্য পরিবহণ, পর্যটন, জৈব প্রযুক্তি এবং বন্দরসহ এমন কি নাই যা যোগান দিচ্ছেনা সমুদ্র? যে তাপ, বায়ু, আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে আমরা আজ শঙ্কিত তারও কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হল সমুদ্র।

অথচ সে সুমুদ্রই আজ বিষণ্ণ, সংকটাপন্ন। যত্রে তত্রে দূষণ, সম্পদের অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পত আহরন ও ব্যাবহারে সাগর মহাসাগর আজ হুমকির মুখে।বলা হচ্ছে দিন দিন সম্পদ শূন্য ও বিষাক্ত হয়ে পড়ছে আমাদের সবচেয়ে উপকারি সাগর মহাসাগর।

জাতিসংঘের পরিবেশ সমীক্ষার এক তথ্যমতে, সমুদ্রের প্রতি বর্গমাইলে ৫০ হাজার পর্যন্ত প্লাস্টিকের বোতল ভাসতে দেখা গেছে এবং বিজ্ঞানিদের ধারণা খুব বেশী দিন লাগবে না পৃথিবীর সবচেয়ে জীবন ধারণের ও জীববৈচিত্রেরর বৃহত্তম বাসস্থান সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে। সমুদ্রের পানির অম্লতা বেড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন বৈশ্বিক উষ্ণতায়, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চাতা। সামুদ্রিক দুর্যোগ ও তার মাত্রা ব্ছরের পড় বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ধ্বংস করছে জীবন ও জীবিকা। এর পরিস্থিতির ধারাবাহিকতার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এর মুলে ই রয়েছে সমুদ্র সম্পর্কে আমাদের প্রকৃত ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমাদ্ধতা এবং জনসচেতনতার অভাব। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতাই যেখানে পৃথিবীর মানুষ আজ কোটি কোটি মাইল দুরের ভিন্ন গ্রহের হাই রেজুলেশন ছবি তুলছে অহরহ, অন্য গ্রহে জীবনের সন্ধান করছে কিংবা মঙ্গল গ্রহে অবকাশের চিন্তা করছে সেখানে জীবন ধারনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক পানির স্বর্গরাজ্য সমুদ্রের মাত্র ১০ ভাগের ও কম সম্পর্কে জানতে পেরেছে মানুষ।

তাই সাগর ও মহাসাগরগুলিকে বাঁচানোর শেষ সময় ও শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সমুদ্র সম্পর্কে নতুন নতুন উদ্ভাবন, তার যথাযথ ব্যবহার এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা ই পারে টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ এসডিজি ১৪ বাস্তবায়ন করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে।



সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনগুলির সন্মিলিত সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এটা সফল করা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন প্রদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এই ধরণের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সময় পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ পরিহার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন থেকে শুরু করে ইকো-টুরিজমকে আরও উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে উপকূলবর্তী এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। সমুদ্রে চলাচলকারী ও এর আশেপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে নানা বিষয়ে সমন্বয় ঘটিয়ে সার্বিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।‌ আর সর্বোপরি লক্ষ রাখতে হবে যেন আমাদের আবিষ্কারগুলো সমুদ্র বান্ধব হয়।

সমুদ্রের এই অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা/উপকারিতা কে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বের সবার সামনে তুলে ধরতে, সমুদ্র সম্পর্কে নতুন নতুন উদ্ভাবন, তার যথাযথ ব্যবহার এবং সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস।

২০০৮ সালে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ এই দিবসটি পালন করলেও ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৩তম অধিবেশনে গৃহীত ১১১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে দ্যা ওশান প্রজেক্ট এবং ওয়ার্ল্ড ওশান নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রতি বছরের ৮ জুন আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক ভাবে দিবসটি পলিত হচ্ছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে আয়োজিত বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনে কানাডা কর্তৃক বিশ্ব সমুদ্র দিবসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
লেখক- ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না
সহযোগী অধ্যাপক, ওশানোগ্রাফিক বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠাতা, ব্লু গ্রীন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
এডভাইজার, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, কক্সবাজার।