সমুদ্র সম্পদ

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২

উপসম্পাদকীয়……

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমাকে বলা হয় মাছের সোনালি ক্ষেত্র। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতি বছর ধরা হয় ৮০ লাখ টন মাছ। অথচ সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার করছে বছরে গড়ে মাত্র সাত লাখ টন। এটি দেশে উৎপাদিত মোট মাছের সাত ভাগের এক ভাগমাত্র। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার পর বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকার মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় বাংলাদেশের ভূ-ভাগের সমান সমুদ্রসীমার অধিকারী হওয়া সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; যার ফলশ্রুতিতে সমুদ্রসীমার বিপুল সম্পদ আহরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার যাকে বলা হচ্ছে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি।

প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচনও করে চলেছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও তার বিশাল সম্পদরাশির সঠিক ব্যবহার চাইছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় দেশের জন্য সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রপ্তানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ; সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্র বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা আছে। এ কারণেই সমুদ্রের মৎস্য সম্পদ আহরণ ও তেল-গ্যাস উত্তোলন ছাড়াও নানামুখী উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে সরকার মহাপরিকল্পনা করার জন্য কার্যক্রম শুরু করে।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল ও গ্যাস রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হলে সেটা দেশের জন্য ব্লু-ইকোনমির আরেকটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে। তেল গ্যাস ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে সালফার, মেটালিক মডিউল, কোবাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট বা মিথেন গ্যাসের জমাট স্তরের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার ০.১১ থেকে ০.৬৩ ট্রিলিয়ন কিউসিক ফুট সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট থাকার বিষয়টি অনুমিত হয়েছে; যা ১৭ থেকে ১০৪ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের সমান।

দেশের স্থলভাগে মজুদ প্রাকৃতিক গ্যাস শেষ হওয়ার পথে। সাগরপ্রান্তে গ্যাস পেলে দেশের অগ্রগতির চাকা আরও বেগবান করা সম্ভব হবে। ব্লু-ইকোনমির কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে-এমনটিও আশা করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

সমুদ্রের তলদেশে সম্পদ অনুসন্ধান এবং তা উত্তোলন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন বিষয়। এ থেকে অঢেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের মিত্র দেশগুলোর সহযোগিতা গ্রহণের বেলায়ও দূরদর্শিতার পরিচয় রাখতে হবে; সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সমুদ্রের সম্পদ আহরণ ও ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যে মানবসম্পদের উন্নয়ন, সে কথা নানামহল থেকেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।

লেখক- গোলাম কিবরিয়া
মার্চেন্ট নেভি অফিসার
স্থান- ভারত মহাসাগর থেকে