আজ ৮ই জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস

প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: সাগর- মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। সমুদ্রের এই অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা আর উপকারীতাকে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বের সবার সামনে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব সমুদ্র দিবস।’ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জঞ্জাল ফেলার জায়গাটির নাম সমুদ্র! মানবজাতির ক্রমাগত অতৎপরতা সমুদ্রকে ভয়ংকর ও দূষিত করে তুলছে।এবারের বিশ্ব সমুদ্র দিবসের প্রতিপাদ্য
‘টেকসই সমুদ্র জন্য আবিষ্কার’ দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো, সাগর-মহাসাগর সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। দিবসটি উপলক্ষে 2017 সাল থেকে বাংলাদেশের প্রথম স্থাপিত এবং একমাত্র সি একুরিয়াম রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর তত্ত্বাবধানে গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন আলোচনা এবং সংস্কৃতঅনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হতো সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে স্বল্প পরিসরে, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর নিজস্ব কনফারেন্স রুমে দ্য লাইট হাউজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং সী এক্সপ্রেস লিমিটেড লিমিটেডের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে আয়োজিত বিশ্ব ধরিত্রী সম্মেলনে কানাডা কর্তৃক বিশ্ব সমুদ্র দিবসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৩তম অধিবেশনে গৃহীত ১১১নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে দ্যা ওসেন প্রজেক্ট এবং ওয়ার্ল্ড ওসেন নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রতি বছরের ৮ জুন আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দিবসটি পলিত হচ্ছে। ২০০৮ সালে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ এই দিবসটি পালন করে।সাগর- মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। সমুদ্রের এই অবদান, আবেদন, প্রয়োজনীয়তা আর উপকারীতাকে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বের সবার সামনে তুলে ধরতে প্রতি বছর ৮ জুন পালন করা হয় বিশ্ব সমুদ্র দিবস।‌মানবসৃষ্ট দূষণ আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে চলছে এই মহান জলরাশিগুলি। বিজ্ঞানীরা জানান, বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিকজাত আবর্জনায় ভরে গেছে এই সব সমুদ্রের কোল।‌জাতিসংঘের পরিবেশ সমীক্ষার এক তথ্যমতে, সমুদ্রের প্রতি বর্গমাইলে ৫০ হাজার পর্যন্ত প্লাস্টিকের বোতল ভাসতে দেখা যায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল, কেমিক্যালসহ আরো নানা রকম বর্জ্য। সারা বিশ্বে আজ সমুদ্র ও উপকূলবর্তী উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি। সাগর ও মহাসাগর নিয়ে জাতসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কার্যালয় একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যার নাম ‘গ্রিন ইকোনমি ইন এ ব্লু ওয়ার্ল্ড’- এই প্রতিবেদনে বিশ্বের সমুদ্রগুলির এক করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে।বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘ পরিবেশ কার্যক্রম ও সমুদ্র সংরক্ষণ সমিতি এক রিপোর্টে বলেছে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও কিছু দেশ সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অনেক চেষ্টা চালিয়েছে, তারপরও এ সমস্যা এখনও খুব গুরুতর।
সমুদ্র… কি বিশাল এক জলরাশি! এর নামটি উচ্চারণ করলেই চোখে ভাসে নীল রঙের মায়ামাখা এক প্রকান্ড পানির উৎসের ছবি। যেখানে ক্রমাগত ঢেউ ছুটে আসছে। বড় বড় ঢেউ ছুটে এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে স্থলভূমির কোল। সেই সব ঢেউয়ের মাথায় নাচছে সাদা ফেনার উচ্ছ্বাস। বালুকাবেলার পাড়ে দীগন্ত জোড়া সেই সব সমুদ্র যেন অনাদীকাল থেকে এমন স্রোত বিলিয়ে চলছে। যারা একটু ভ্রমণমুখী, তাদের চোখে ভেসে উঠবে কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটা কিংবা টেকনাফের সমুদ্র সৈকতগুলির ছবি। এখন অবশ্য সমুদ্রের উপরিভাগ আর তলদেশ আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে নানা চ্যানেলের আয়োজন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডিসকভারি কিংবা এনিমেল প্লানেট। এসব চ্যানেলে সমুদ্রকে ঘিরে দুর্দান্ত সব অভিযান আর বিচিত্র সব প্রাণীদের নিয়ে অসংখ্য প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয় নিয়মিত। কিন্তু আমরা খালি চোখে যেটুকু দেখি, সমুদ্রের অবদান আর আবেদন তার চেয়েও অনেক বেশি। সাগর- মহাসাগরকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আমাদের অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা হলো এসব সাগর আর মহাসাগর। সেই সঙ্গে সমুদ্র ব্যবহার ও পরিবেশ ভাল রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনের বিন্যাস, বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের দরজা খুলে দেয় এই বিশেষ দিবসটি। এই সাগর-মহাসাগরগুলো পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের বেশিরভাগ খাদ্য ও অষুধের উৎসও হলো সাগর ও মহাসাগরগুলো। অসংখ্য কারণে মানুষ সমুদ্রের উপর নির্ভর করে। তিনি বিলিয়নের বেশি মানুষ সরাসরি সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। সমুদ্র থেকে মানুষ প্রতি বছর যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করে এবং এর উপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন করে তার অর্থনৈতিক মূল্য বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এতো উপকার করার পরেও আমরা সমুদ্রকে রেহাই দিচ্ছি না। দিনের পর দিন নানা ভাবে, নানা চেহারা তার ক্ষতি করেই চলছি। পরিসংখ্যান আর বাস্তবতা বলছে, মোট সাগর আর মহাসাগরের ৪০ শতাংশের বেশি ক্ষতির শিকার হয়ে গেছে। মানবসৃষ্ট দূষণ আর আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে চলছে এই মহান জলরাশিগুলি। বিজ্ঞানীরা জানান, বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিকজাত আবর্জনায় ভরে গেছে এই সব সমুদ্রের কোল। জাতিসংঘের পরিবেশ সমীক্ষার এক তথ্যমতে, সমুদ্রের প্রতি বর্গমাইলে ৫০ হাজার পর্যন্ত প্লাস্টিকের বোতল ভাসতে দেখা যায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তেল, কেমিক্যালসহ আরো নানা রকম বর্জ্যরে নমুনা। অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে বলে বসেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে সমুদ্র। সারা বিশ্বে আজ সমুদ্র ও উপকূলবর্তী উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। সাগর ও মহাসাগর নিয়ে জাতসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কার্যালয় একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যার নাম ‘গ্রিন ইকোনমি ইন এ ব্লু ওয়ার্ল্ড’- এই প্রতিবেদনে বিশ্বের সমুদ্রগুলির এক করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে। জলাবায়ু পরিবির্তন, নানা রকম দূষণ ও সামুদ্রিক সম্পদের মাত্রাহীন ব্যবহারের ফলে আজ এই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে। এর পরিস্থিতির ধারাবাহিকতার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে। তবে সাগর ও মহাসাগরগুলিকে বাঁচানোর এখনও সুয়োগ আরে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনগুলির সন্মিলিত সক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন প্রদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এই ধরণের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সময় পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যাবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন থেকে শুরু করে ইকো-টুরিজমকে আরও উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে উপকূলবর্তী এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। সমুদ্রে চলাচলকারী ও এর আশেপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে নানা বিষয়ে সমন্বয় ঘটিয়ে সার্বিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।‌ আর সর্বোপরি লক্ষ রাখতে হবে আমাদের আবিষ্কারগুলো সমুদ্র বান্ধব হয়।

সমুদ্র সাক্ষরতার উপর দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশনের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না । ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দীন মুন্না সামুদ্রিক জ্ঞানের উপর আমাদের দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি সমুদ্র বিষয়ক জ্ঞান এর উপর শিক্ষাদানের জন্য কাজ করে আসছেন। বিশ্ব সমুদ্র দিবস ২০২০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় কথা বলতে গিয়ে দ্য লাইট হাউজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, পরিচালক লায়ন মোঃ আবদুল্লাহ ভূঁইয়া শাহাদাত বলেন, আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে সমুদ্র, আর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষেরই সমুদ্র সম্পর্কে জ্ঞান খুবই কম, যা আমাদের দেশের সামুদ্রিক অর্থনীতির জন্য প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ। ব্লু গ্রিন ফাউন্ডেশন, দ্য লাইট হাউজ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড এর সমুদ্র শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা রোরেক (ROREC) দীর্ঘদিন যাবৎ সমুদ্র সাক্ষরতা উপর কাজ করে আসছে।

করোনা পরিবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করার জন্য টেকসই সমুদ্র উন্নয়নের বিকল্প কোন কিছু দেখছেন না, সামুদ্রিক গবেষকরা।