জাহাজীদের নীরব আত্মত্যাগ

প্রকাশিত: ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০২০


লাইটহাউজ সংবাদ- থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তাইফুর রহমান তার জাহাজে যোগদান করেছিলেন গত বছরের নভেম্বরে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তার পরিবারের সাথেই রমজান এবং ঈদ পালনের কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে হাজার হাজার জাহাজীদের মত তিনিও আটকে পড়েছেন।

তিনি লাইটহাউজ প্রতিনিধিকে তার ঈদের অনূভুতি ব্যক্ত করেছেন।

আজ আমার ঈদ, সবাইকে ঈদ মোবারক। জাহাজে এরকমটা কখনো করি না, কিন্তু কেন যেন এবার মন চাইল।

আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন সাবান দিয়ে গোসল করেছি। মিস্টি জাতীয় হিসেবে একটু মধু খেয়ে নতুন বয়লার স্যুট পড়ে ইঞ্জিনরুমে গেছি রাউন্ড দিতে (ভাগ্যিস ঈদ রবিবারে হচ্ছে)। এর পর কেবিনে আসার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে এসেছি।

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ঈদ জাহাজেই কাটে। তবে এবার রোজাগুলো রাখতে আলহামদুলিল্লাহ খুব ভাল লেগেছে।

খুব খারাপ লাগছে বাড়িতে থাকতে না পেরে, হিসাবটা সেরকমই ছিল, কিন্তু করোনা এসে সব গড়বড় করে দিয়েছে।

মিমির খুব ইচ্ছে ছিল আমরা বাবা ছেলে একই রঙের পাঞ্জাবি পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে দিয়ে ঈদগাহে যাব। কিন্তু হায় বাবা ৬ হাজার মাইল দূরের কোন বন্দরে একাকি ঈদের আমেজ নেয়ার লুকোচুরি করছে।

খুব কষ্ট হচ্ছে মিমি আর আমাদের ছেলে তাহীমের জন্য। ছেলেটার প্রথম ঈদ কিন্তু বাবার সাথে এখনো দেখাই হলো না।

জাহাজিদের ঈদ আসলে এভাবেই কাটে। কারও ভাগ্য ভাল হলে সাথে দুইচারজন মুসলিম পাওয়া যায়, একটু উদযাপনের সু্যোগ মিলে। কিন্তু অধিকাংশের ভাগ্যেই সেটা জোটেনা, কখন ঈদ পার হয়ে যায় অনেকে জানে না। চলে যাবার পর মনে পড়ে অহ..আজ তো ঈদ ছিল।

আমাদের এই আত্নত্যাগের কখনোই তেমন কোন চিহ্ন থাকেনা, এই আত্নত্যাগ হয় নিরবে, বুঝতে পারে শুধু জাহাজি আর তার অপেক্ষায় থাকা প্রিয়মানুষটি।