বিস্তৃত হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর

প্রকাশিত: ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বশেষ পাঁচটি জেটি নিয়ে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হয়েছিল । এরপর গত ১৩ বছরে বন্দরে যোগ হয়নি নতুন জেটি কিংবা টার্মিনাল। ফলে বিদ্যমান জেটি দিয়েই প্রতিবছর পণ্য উঠানামার প্রবৃদ্ধি সামাল দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ধারনক্ষমতার অতিরিক্ত কন্টেইনার সামাল দিতে গিয়ে প্রায় সময়ই হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই সংকট সামাল দিতে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) বন্দরের বহরে নতুন করে আরো ৪টি জেটির নির্মান কাজ শুরু হয় আর এই চারটি জেটির নির্মান কাজ দ্রুত শেষ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিয়ে নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০১৯ সালে ডিসেম্বরে নির্মান কাজ শেষ করে জেটি অপারেশনে আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই জেটির নির্মান কাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেও শেষ হয়নি। করোনার আগেই দুদফা সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারিত হয়। এখন করোনার কারণে আবারও সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুনে লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
এদিকে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের চারটি জেটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ করলে বছরে চার লাখ একক পণ্য উঠানামা করা সম্ভব হবে। কিন্তু ২০২১ সালের জুনে নির্মান শেষ হলেও চারটি জেটিতে যন্ত্রপাতি যোগ করে পণ্য উঠানামা শুরু করতে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ লাইট হাউজ নিউজ ক্লাবকে বলেন, ‘আগে আমরা বন্দরের নিজস্ব যন্ত্রপাতি কিনে পরিচালনার কথা থাকলেও এখন বিদেশি অপারেটর নিয়োগ করে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ওই অপারেটর নিজস্ব ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কিনে টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। তবে সেটি এখনও চুড়ান্ত হয়নি।
তবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ২০২১ সালের জুন থেকেই আমরা এই চারটি জেটিতে সাধারন পণ্যের জাহাজ ভিড়াতে পারবো। একইসাথে গিয়ারড বা ক্রেনযুক্ত কন্টেইনার জাহাজ ভিড়াতে পারবো; যেখানে জাহাজের ক্রেন দিয়ে কন্টেইনার উঠানামা করা হবে। এতে বন্দরের মুল জেটির ওপর পণ্য উঠানামার চাপ কমবে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে চট্টগ্রাম বোটক্লাব পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। এরমধ্যে তিনটি কন্টেইনার জেটি এবং একটি তেল খালাসের ডলফিন জেটি। প্রকল্পের আওতায় ৩২ একর এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হবে ৬০০ মিটার দীর্ঘ তিনটি জেটি। থাকবে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি ও ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং সড়ক।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কন্টেইনার টার্মিনাল হবে পিসিটি। এখানে ২৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ করা হবে। রেললাইনটা সংযুক্ত থাকবে সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডের সাথে। ইতোমধ্যে ১০ একর জায়গায় কন্টেইনার ইয়ার্ড হয়েছে। সাথে আরো ৬ একর জায়গায় ঠিকাদারকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে কাজ করার জন্য। এই ১৬ একর জায়গায় পিসিটির সাথে রেললাইন সংযুক্ত থাকবে । ফলে জাহাজ থেকে নামিয়ে কন্টেইনার কম সময়েই বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।
প্রকল্পের আওতায় সাড়ে সাতশ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেই পরিচালনার কথা থাকলেও সেই অবস্থান থেকে বন্দর সরে আসে। এখন বিদেশি অপারেটরই যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে টার্মিনালটি পরিচালনা করবে।
বন্দরের নিজস্ব তহবিলের সাড়ে ১৮শ কোটি টাকায় নির্মিতব্য জেটিতে বছরে চার লাখ একক কন্টেইনার উঠানামা করা সম্ভব। নতুন জেটি-টার্মিনাল না আসা পর্যন্ত এই পিসিটি দিয়েই বাড়তি পণ্য উঠানামা সামাল দেয়া যাবে বলে মনে করছেন বন্দর কর্মকর্তারা।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান লাইট হাউজ নিউজ ক্লাবকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। একইসাথে টার্মিনালের ভেতর দিয়ে যাতে বিমানবন্দরমুখী গাড়িগুলো দ্রুত যাতায়াত করতে পারে সেজন্য ৪২০ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষ। এছাড়া ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আরো দুটি লেনও রাখা হয়েছে।